মুকুট
দূতের প্রবেশ

রাজধর। কী রে, যুদ্ধের খবর কী?

দূত। আজ্ঞে, লড়াই তো সমস্ত দিন ধরেই চলেছে, কিন্তু এ পর্যন্ত এঁরা শত্রুদের ব্যূহ ভেদ করতে পারেন নি। সূর্য অস্ত যাবার আর তো বেশি দেরি নেই, অন্ধকার হয়ে এলে বোধ হয় যুদ্ধ আজকের মতো বন্ধ রাখতে হবে।

দ্বিতীয় দূতের প্রবেশ

রাজধর। কে তুমি?

দ্বিতীয় দূত। আজ্ঞে আমি ব্যোমকেশ, যুবরাজ আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন—সেও প্রায় দুই প্রহর হয়ে গেল—আপনার যেখানে সৈন্য নিয়ে থাকবার কথা ছিল সেখানে আপনার কোনো চিহ্ন না পেয়ে বহু সন্ধানে এখানে এসেছি।

রাজধর। যুবরাজের আদেশ কী?

দূত। শত্রুসৈন্যের সংখ্যা আমরা যেরকম অনুমান করেছিলুম তার চেয়ে অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধ খুব কঠিন হয়ে এসেছে। কুমার ইন্দ্রকুমার তাঁর অশ্বারোহী-দল নিয়ে শত্রুসৈন্যের উত্তর দিক আক্রমণ করেছিলেন, আর কিছুক্ষণ সময় পেলেই তিনি সে দিক থেকে শত্রুসৈন্যকে একেবারে নদীর কিনারা পর্যন্ত হঠিয়ে আনতে পারতেন।

রাজধর। সত্যি নাকি! সময় পেলে কী করতে পরতেন সে কথা কল্পনা করে বিশেষ লাভ দেখি নে, কিন্তু সময় পান নি বলেই বোধ হচ্ছে।

দূত। শত্রুসৈন্যকে যখন প্রায় টলিয়ে এনেছেন এমন সময় খবর পেলেন যে যুবরাজ সংকটে পড়ছেন, শত্রু তাঁকে ঘিরে ফেলেছে। ইশা খাঁ তখন অন্য দিকে যুদ্ধে নিযুক্ত ছিলেন, তিনি খবর পেয়ে বললেন, যুবরাজকে উদ্ধার করবার জন্যে আমি এখানে আসি নি, আমাকে যুদ্ধে জিততে হবে; আমি এখান থেকে নড়তে গেলেই শত্রুরা সুবিধা পাবে।
রাজধর। দাদা কি তবে-

দূত। না, তাঁর কোনো বিপদ এখনো ঘটে নি। ইন্দ্রকুমার সৈন্য নিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেছেন। কিন্তু এই গোলেমালে যুদ্ধে আমাদের অসুবিধা ঘটল। আপনাকে সন্ধান করবার জন্যে নানা দিকে দূত গিয়েছে। আপনার সাহায্য না হলে বিপদ ঘটতেও পারে, অতএব আপনি আর কিছুমাত্র বিলম্ব করবেন না।

রাজধর। না, কিছুমাত্র বিলম্ব করব না। যাও, বিশ্রাম করো গে যাও—আমি প্রস্তুত হচ্ছি।

[দূতের প্রস্থান

ধুরন্ধর। তুমি যাচ্ছ নাকি?

রাজধর। যাচ্ছি বটে, কিন্তু ও দিকে নয়, অন্য দিকে।

ধুরন্ধর। বাড়ির দিকে?

রাজধর। তুমিও কি ইশা খাঁর কাছ থেকে বিদ্রূপ অভ্যেস করেছ! বীরত্ব যাঁর খুশি তিনি দেখান, কিন্তু যুদ্ধে জয় করে যদি কেউ বাড়ি ফেরে তো সে রাজধর। ধুরন্ধর, যাও তুমি—দেখো গে আমার শিবিরে কোথাও যেন কেউ আগুন না জ্বালে, একটি প্রদীপও যেন না জ্বলতে পায়।

ধুরন্ধর। আচ্ছা আমি সকলকে সতর্ক করে দিচ্ছি, কিন্তু কী তোমার অভিপ্রায় খুলেই বলো না—তুমি যদি আমাকে আর আমি যদি তোমাকে সন্দেহ করি তা হলে পৃথিবীতে আমাদের দুটির তো কোথাও ভর দেবার জায়গা থাকবে না।

রাজধর। আজ রাত্রের অন্ধকারে আমি সৈন্য নিয়ে গোপনে নদী পার হয়ে যাব। হঠাৎ আরাকান-রাজের শিবিরে উপস্থিত হয়ে