মুকুট
তৃতীয় দৃশ্য
পরীক্ষাভূমি
রাজা, রাজকুমারগণ, ইশা খাঁ, নিশানধারী ও ভাট

ইন্দ্রকুমার। দাদা, আজ তোমাকে জিততেই হবে, নইলে চলবে না।

যুবরাজ। চলবে না তো কী! আমার তীরটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও জগৎসংসার যেমন চলছিল ঠিক তেমনিই চলবে। আর, যদি বা নাই চলত তবু আমার জেতবার কোনো সম্ভাবনা দেখছি নে।

ইন্দ্রকুমার। দাদা, তুমি যদি হারো তবে আমি ইচ্ছাপুর্বক লক্ষ্যভ্রষ্ট হব।

যুবরাজ। না ভাই, ছেলেমানুষি কোরো না। ওস্তাদের নাম রাখতে হবে।

ইশা খাঁ। যুবরাজ, সময় হয়েছে, ধনুক গ্রহণ করো। মনোযোগ কোরো। দেখো, হাত ঠিক থাকে যেন।

যুবরাজের তীর-নিক্ষেপ

ইশা খাঁ। যাঃ! ফসকে গেল।

যুবরাজ। মনোযোগ করেছিলুম খাঁ সাহেব, তীরযোগ করতেই পারলুম না।

ইন্দ্রকুমার। কখনো না। মন দিলে তুমি নিশ্চয়ই পারতে। দাদা, তুমি কেবল উদাসীন হয়ে সব জিনিস ঠেলে ফেলে দাও, এতে আমার ভারি কষ্ট হয়।

ইশা খাঁ। তোমার দাদার বুদ্ধি তীরের মুখে কেন খেলে না, তা জান? বুদ্ধিটা তেমন সূক্ষ্ম নয়।

ইন্দ্রকুমার। সেনাপতি সাহেব, তুমি অন্যায় বলছ।

ইশা খাঁ। (রাজধরের প্রতি) কুমার, এবার তুমি লক্ষ্য ভেদ করো, মহারাজ দেখুন।

রাজধর। আগে দাদার হোক।

ইশা খাঁ। এখন উত্তর করবার সময় নয়, আমার আদেশ পালন করো।

রাজধরের তীর-নিক্ষেপ

ইশা খাঁ। যাক্‌, তোমার তীরও তোমার দাদার তীরেরই অনুসরণ করেছে—লক্ষ্যের দিকে লক্ষও করে নি।

যুবরাজ। ভাই, তোমার বাণ অনেকটা নিকট দিয়েই গেছে, আর-একটু হলেই লক্ষ্য বিদ্ধ করতে পারত।

রাজধর। লক্ষ্য বিদ্ধ তো হয়েছে! দূর থেকে তোমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছ না। ঐ-যে বিদ্ধ হয়েছে।

যুবরাজ। না, রাজধর, তোমার দৃষ্টির ভ্রম হয়েছে—লক্ষ্য বিদ্ধ হয় নি।

রাজধর। আমার ধনুর্বিদ্যার প্রতি তোমাদের বিশ্বাস নেই বলেই তোমরা দেখেও দেখতে পাচ্ছ না। আচ্ছা, কাছে গেলেই প্রমাণ হবে।

ইন্দ্রকুমারের ধনুক-গ্রহণ

যুবরাজ। (ইন্দ্রকুমারের প্রতি) ভাই আমি অক্ষম, সেজন্যে আমার উপর তোমার রাগ করা উচিত না। তুমি যদি লক্ষ্যভ্রষ্ট হও