প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
ইন্দ্রকুমার। ঠান্ডা হও ভাই,ঠান্ডা হও। তোমার বুদ্ধি তোমারই থাক্,তার প্রতি আমার কোনো লোভ নেই।
ইশা খাঁ। ওঁর বুদ্ধিটা সম্প্রতি বড়োই বেড়ে উঠেছে।
ইন্দ্রকুমার। নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না,মই লাগাতে হবে।
রাজধর। মহারাজের কাছে আমার নালিশ আছে।
মহারাজ। কী হয়েছে?
রাজধর। ইশা খাঁ পুনঃপুনঃ নিষেধসত্ত্বে আমার অসম্মান করেন। এর বিচার করতে হবে।
ইশা খাঁ। অসম্মান কেউ করে না,অসম্মান তুমি করাও। আরো তো রাজকুমার আছেন। তাঁরাও মনে রাখেন আমিও তাঁদের গুরু,আমি মনে রাখি তাঁরা আমার ছাত্র—সম্মান-অসম্মানের কোনো কথাই ওঠে না।
মহারাজ। সেনাপতি সাহেব,কুমারদের এখন বয়স হয়েছে,এখন ওঁদের মান রক্ষা করে চলতে হবে বৈকি।
ইশা খাঁ। মহারাজ যখন আমার কাছে যুদ্ধ শিক্ষা করেছেন তখন মহারাজকে যেরকম সম্মান করেছি রাজকুমারদের তা অপেক্ষা কম করি নে।
রাজধর। অন্য কুমারদের কথা বলতে চাই নে, কিন্তু—
ইশা খাঁ। চুপ করো বৎস। আমি তোমার পিতার সঙ্গে কথা কচ্ছি। মহারাজ, মাপ করবেন, রাজবংশের এই কনিষ্ঠ পুত্রটি বড়ো হলে মুন্শির মতো কলম চালাতে পারবে, কিন্তু তলোয়ার এর হাতে শোভা পাবে না। (যুবরাজ এবং ইন্দ্রকুমারকে দেখাইয়া) চেয়ে দেখুন মহারাজ, এঁরাই তো রাজপুত্র, রাজগৃহ আলো করে আছেন।
মহারাজ। রাজধর, খাঁ সাহেব কী বলছেন! তুমি অস্ত্রশিক্ষায় ওঁকে সন্তুষ্ট করতে পার নি?
রাজধর। সে আমার ভাগ্যের দোষ, অস্ত্রশিক্ষার দোষ নয়। মহারাজ নিজে আমাদের ধনুর্বিদ্যার পরীক্ষা গ্রহণ করুন, এই আমার প্রার্থনা।
মহারাজ। আচ্ছা, উত্তম। কাল আমাদের অবসর আছে, কালই পরীক্ষা হবে। তোমাদের মধ্যে যে জিতবে তাকে আমার এই হীরে-বাঁধানো তলোয়ার পুরস্কার দেব।
ইশা খাঁ। শাবাশ রাজধর, শাবাশ! আজ তুমি ক্ষত্রিয়সন্তানের মতো কথা বলেছ। অস্ত্রপরীক্ষায় যদি তুমি হার তাতেও তোমার গৌরব নষ্ট হবে না। হার-জিত তো আল্লার ইচ্ছা, কিন্তু ক্ষত্রিয়ের মনে স্পর্ধা থাকা চাই।
রাজধর। থাক্ সেনাপতি, তোমার বাহবা অন্য রাজকুমারদের জন্য জমা থাক্; এত দিন তা না পেয়েও যদি চলে গিয়ে থাকে তবে আজও আমার কাজ নেই।
যুবরাজ। রাগ কোরো না ভাই রাজধর। সেনাপতি সাহেবের সরল ভর্ৎসনা ওঁর সাদা দাড়ির মতো সমস্তই কেবল ওঁর মুখে। কোনো একটি গুণ দেখলেই তৎক্ষণাৎ উনি সব ভুলে যান। অস্ত্রপরীক্ষায় যদি তোমার জিত হয় তা হলে দেখবে, খাঁ সাহেব তোমাকে যেমন মনের সঙ্গে পুরস্কৃত করবেন এমন আর কেউ নয়।
রাজধর। দাদা, আজ পূর্ণিমা আছে, আজ রাত্রে যখন গোমতী নদীতে বাঘে জল খেতে আসবে তখন শিকার করতে গেলে হয় না?