মালঞ্চ
শ্রান্তিতে নীরজা বালিশে মাথা এলিয়ে চুপ করে পড়ে রইল। ধীরে ধীরে ঘর থেকে সরলার প্রস্থান


হলা। বউদিদি, একটা পিতলের ঘটি। কটকের তৈরি। এ জিনিসের দরদ তুমিই বুঝবে, তোমার ফুলদানি মানাবে ভালো।

নীরজা। এর দাম কত হবে?

হলা। (জিভ কেটে) এমন কথা বলো না। ঐ ঘটির দাম নেব? তোমার খেয়ে-পরেই মানুষ!


ঘটি টেবিলে রেখে অন্য ফুলদানি থেকে ফুল নিয়ে সাজিয়ে দিলে। যাবার মুখো হয়ে ফিরে দাঁড়িয়ে


আমার ভাগনীর বিয়েতে সেই বাজুবন্ধের কথাটা ভুলো না বউদিদি। পিতলের জিনিস যদি দিই তাতে তোমারি নিন্দে হবে।

নীরজা। আচ্ছা আচ্ছা, স্যাকরাকে ফরমাশ দেব, তুই এখন যা।

[হলার প্রস্থান


দ্বিতীয় দৃশ্য
নীরজা শয্যায় অর্ধশায়িত। তার খুড়তুতো দেওর রমেনের প্রবেশ

রমেন। বউদি, দাদা পাঠিয়ে দিলেন। আজ আফিসে কাজের ভিড়, হোটেলে খাবেন, দেরি হবে ফিরতে।

নীরজা। (হেসে) খবর দেবার ছুতো করে এক দৌড়ে ছুটে এসেছ, ঠাকুরপো। কেন, আপিসের বেহারাটা মরেছে বুঝি?

রমেন। তোমার কাছে আসতে তুমি ছাড়া অন্য ছুতোর দরকার কিসের বউদি? বেহারা বেটা কী বুঝবে এই দূতপদের দরদ।

নীরজা। ওগো মিষ্টি ছড়াচ্ছ অস্থানে। এ ঘরে এসেছ কোন্‌ ভুলে? তোমার মালিনী আছেন আজ একাকিনী নেবু কুঞ্জবনে। দেখো গে যাও।

রমেন। কুঞ্জবনের বনলক্ষ্মীকে দর্শনী দিই আগে, তার পরে যাব মালিনীর সন্ধানে।

এই বলে বুকের পকেট থেকে একখানা গল্পের বই বের করে নীরজার হাতে দান

নীরজা। “অশ্রুশিকল” — এই বইটাই চাচ্ছিলুম। আশীর্বাদ করি,তোমার মালঞ্চের মালিনী চিরদিন বুকের কাছে বাঁধা থাক্‌ হাসির শিকলে।— ঐ যাকে তুমি বলো তোমার কল্পনার দোসর— তোমার স্বপ্নসঙ্গিনী। কী সোহাগ গো!

রমেন। আচ্ছা বউদি, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, ঠিক উত্তর দিয়ো।

নীরজা। কী কথা?

রমেন। সরলার সঙ্গে আজ কি তোমার ঝগড়া হয়ে গেছে?

নীরজা। কেন বলো তো?

রমেন। দেখলুম ঝিলের ধারে ঘাটে চুপ করে সে বসে আছে। মেয়েদের তো পুরুষদের মতো কাজ-পালানো উড়ো-মন নয়। এমন বেকার দশা আমি সরলার কোনোদিন দেখি নি। জিজ্ঞাসা করলুম ‘মন কোন্‌ দিকে? ’ ও বললে— ‘যে দিকে তপ্ত হাওয়া শুকনো পাতা ওড়ায় সেই দিকে।’ আমি বললুম— ‘ওটা হল হেঁয়ালি, স্পষ্ট ভাষায় কথা কও।’ সে বললে— ‘সব কথারই কি