মাল্যদান
গলায় পরাইয়া দিল।

তখন পটল তাহার কাছে আসিয়া ডাকিল, “ কুড়ানি। ”

কুড়ানি তাহার শীর্ণ মুখ উজ্জ্বল করিয়া কহিল, “ কী, দিদি। ”

পটল তাহার কাছে আসিয়া তাহার হাত ধরিয়া কহিল, “ আমার উপর তোর কোন রাগ নাই, বোন? ”

কুড়ানি স্নিগ্ধ কোমলদৃষ্টিতে কহিল, “ না, দিদি। ”

পটল কহিল, “ যতীন, একবার তুমি ও ঘরে যাও। ”

যতীন পাশের ঘরে গেলে পটল ব্যাগ খুলিয়া কুড়ানির সমস্ত কাপড়-গহনা তাহার মধ্য হইতে বাহির করিল। রোগিণীকে অধিক নাড়াচাড়া না করিয়া একখানি লাল বেনারসি শাড়ি সন্তর্পণে তাহার মলিন বস্ত্রের উপর জড়াইয়া দিল। পরে একে একে এক-একগাছি চুড়ি তাহার হাতে দিয়া দুই হাতে দুই বালা পরাইয়া দিল। তার পরে ডাকিল, “ যতীন। ”

যতীন আসিতেই তাহাকে বিছানায় বসাইয়া পটল তাহার হাতে কুড়ানির একছড়া সোনার হার দিল। যতীন সেই হারছড়াটি লইয়া আস্তে আস্তে কুড়ানির মাথা তুলিয়া ধরিয়া তাহাকে পরাইয়া দিল।

ভোরের আলো যখন কুড়ানির মুখের উপরে আসিয়া পড়িল তখন সে আলো সে আর দেখিল না। তাহার অম্লান মুখকান্তি দেখিয়া মনে হইল, সে মরে নাই — কিন্তু সে যেন একটি অতলস্পর্শ সুখস্বপ্নের মধ্যে নিমগ্ন হইয়া গেছে।

যখন মৃতদেহ লইয়া যাইবার সময় হইল তখন পটল কুড়ানির বুকের উপর পড়িয়া কাঁদিতে কাঁদিতে কহিল, “ বোন, তোর ভাগ্য ভালো। জীবনের চেয়ে তোর মরণ সুখের। ”

যতীন কুড়ানির সেই শান্তস্নিগ্ধ মৃত্যুচ্ছবির দিকে চাহিয়া ভাবিতে লাগিল, ‘ যাঁহার ধন তিনিই নিলেন, আমাকেও বঞ্চিত করিলেন না। '