বসন্ত
              দোলাও তুমি ঢেউয়ের পরে।
        তোমার হাসির আভাস লেগে
        বিশ্বদোলন দোলার বেগে
        উঠল জেগে আমার গানের
               কল্লোলিনী কলরোলা।

রাজা। এবার ঐ কে আসে।

কবি। বলব না। চিনতে পারেন কি না দেখতে চাই।

দখিনহাওয়া


শুকনো পাতা কে যে ছড়ায় ওই দূরে
        উদাস-করা কোন্‌ সুরে।
ঘরছাড়া ওই কে বৈরাগী  
জানি না যে কাহার লাগি
          ক্ষণে ক্ষণে শূন্য বনে যায় ঘুরে।
চিনি চিনি হেন ওরে হয় মনে,  
ফিরে ফিরে যেন দেখা ওর সনে।
     ছদ্মবেশে কেন খেল,
     জীর্ণ এ বাস ফেলো ফেলো,
          প্রকাশ করো চিরনূতন বন্ধুরে।

রাজা। ওহে কবি, তোমার এ পালাটা কী রকম করে তুলেছ। বরযাত্রীরই ভিড়, বর কোথায়। তোমার ঋতুরাজ কই।

কবি। ওই যে, এই খানিক আগে দেখলেন।

রাজা। ওই জীর্ণ বসন পরে শুকনো পাতা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে? ওতে তো নবীনের রূপ দেখলুম না। ও তো মূর্তিমান পুরাতন।

কবি। তবে তো চিনতে পারেন নি, ঠকেছেন। আমাদের ঋতুরাজের যে গায়ের কাপড়খানা আছে, তার এক পিঠে নূতন, এক পিঠে পুরাতন। যখন উলটে পরেন তখন দেখি শুকনো পাতা, ঝরা ফুল; আবার যখন পালটে নেন তখন সকালবেলার মল্লিকা, সন্ধ্যাবেলার মালতী— তখন ফাল্গুনের আম্রমঞ্জরি, চৈত্রের কনকচাঁপা। উনি একই মানুষ নূতন-পুরাতনের মধ্যে লুকোচুরি করে বেড়াচ্ছেন।

রাজা। তা হলে নবীন মূর্তিটা একবার দেখিয়ে দাও। আর দেরি কেন।

কবি। ওই-যে এসেছেন। পথিকবেশে, নূতন-পুরাতনের মাঝখানকার নিত্য যাতায়াতের পথে।

রাজা। তোমার পলাতকা বুঝি পথে-পথেই থাকেন?

কবি। হাঁ, উনি বাস্তুছাড়ার দলপতি, আমি ওঁরই গানের তলপি বয়ে বেড়াই।