সুন্দর
ওগো দখিন হাওয়া, ও পথিক হাওয়া, দোদুল দোলায় দাও দুলিয়ে।
নূতন-পাতার-পুলক-ছাওয়া পরশখানি দাও বুলিয়ে।
আমি   পথের ধারে ব্যাকুল বেণু হঠাৎ তোমার সাড়া পেনু গো—
আহা, এসো আমার শাখায় শাখায় প্রাণের গানের ঢেউ তুলিয়ে॥
ওগো দখিন হাওয়া, ও পথিক হাওয়া, পথের ধারে আমার বাসা।
জানি তোমার আসা-যাওয়া শুনি তোমার পায়ের ভাষা।
আমায়   তোমার ছোঁওয়া লাগলে পরে একটুকুতেই কাঁপন ধরে গো—
আহা, কানে কানে একটি কথায় সকল কথা নেয় ভুলিয়ে॥

এবার আনো তোমার নব কিশলয়ের নাচ।

নুটু। রানী, সুন্দর যাকে আপনি এসে বর দেন আমরা তো সে দলের লোক নই।

অমিতা। এমন কথা বলিস নে বসন্তিকা। আমাদেরও ক্ষণে ক্ষণে ছোঁওয়া লাগে। আমরা পাই আবার হারাই। দানের ধর এখানে-ওখানে ছড়িয়ে যায়। সমস্ত জীবন ধরে সেইগুলিকেই কুড়িয়ে কুড়িয়ে গেঁথে রাখি, সেই কি কম ভাগ্য? তুই যা তো, বল্লরীকে ওই গানটা ধরিয়ে দে—

একটুকু ছোঁওয়া লাগে, একটুকু কথা শুনি
তাই দিয়ে মনে মনে রচি মম ফাল্গুনী।
কিছু পলাশের নেশা, কিছু বা চাঁপায় মেশা,
তাই দিয়ে সুরে সুরে রঙে রসে জাল বুনি॥
যেটুকু কাছেতে আসে ক্ষণিকের ফাঁকে ফাঁকে
চকিত মনের কোণে স্বপনের ছবি আঁকে।
যেটুকু যায় রে দূরে ভাবনা কাঁপায় সুরে,
তাই নিয়ে যায় বেলা নূপুরের তাল গুনি॥

অমিতা। বসন্ত এসেছেন।

নুটু। কই রানী, এখনো তো দেখতে পাচ্ছি নে।

অমিতা। কোথায় দেখছিস তুই? অন্তরের ভিতরে চেয়ে দেখ-না।

নুটু। সেখানে কী যে আছে সে আরো চোখে পড়ে না। কবি আমাকে গান দিয়েছেন গাইতে পারি কিন্তু দৃষ্টি তো দেন নি।

অমিতা। নিজের কথাটা একটু কম করে বলাই তোর অভ্যাস। আমি জানি তোর অন্তরের মধ্যে চেতনার জোয়ার এসেছে। নন্দন পথযাত্রার আহ্বান জেগেছে। যা, আর দেরি না— সবাইকে ডাক, আবাহন-গান হোক— দেখতে দেখতে সময় যে চলে যায়।


এস     এস বসন্ত ধরাতলে।
আন    মুহু মুহু নব তান, আন নব প্রাণ নব গান।
আন    গন্ধমদভরে অলস সমীরণ
আন    বিশ্বের অন্তরে অন্তরে নিবিড় চেতনা।