ঋণশোধ

লক্ষেশ্বর। লোকটা বলে কী? তুমি ঘরে বাইরে সন্ধান করবার ব্যাবসা ধরেছ –রাজা খবর পেলে যে তোমাকে আর ঘরের বার হতে দেবে না। পাহারা বসিয়ে দেবে।

শেখর। আমি রাজাকে সুদ্ধ এই ব্যাবসা ধরাব –যা মাঠে ঘাটে ছড়ানো আছে তাই সংগ্রহ করবার বিদ্যে তাঁকে শেখাতে চাই।

লক্ষেশ্বর। কথাটা আর একটু স্পষ্ট করে বলো তো।

শেখর। তা হলে একেবারেই বুঝতে পারবে না।

লক্ষেশ্বর। ওহে বাপু, তোমার ওই সন্ধানের কাজটা ঠিক আমার এই ঘরের কাছটাতে না হয়ে কিছু তফাতে হলে আমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারি।

শেখর। আমাকে দেখে তোমার ভয় হচ্ছে কেন বলো তো।

লক্ষেশ্বর। সত্যি কথা বলব? তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি রাজার চর। কোথা থেকে কী আদায় করা যেতে পারে রাজাকে সেই সন্ধান দেওয়াই তোমার মতলব।

শেখর। আদায় করবার জায়গা তো আমি খুঁজি বটে! তোমার বুদ্ধি আছে হে।

লক্ষেশ্বর। আছে বৈকি। সেইজন্যেই হাত জোড় করে বলছি আমার ঘরটার দিকে উঁকি দিয়ো না –আমি তোমাকে খুশি করে দেব।

শেখর। তোমার চেহারা দেখেই বুঝেছি সন্ধান করবার মতো ঘর তোমার নয়।

লক্ষেশ্বর। আশ্চর্য তোমার বুদ্ধি বটে। এ নইলে রাজকর্মচারী হবে কোন্‌ গুণে? রাজা বেছে বেছে লোক রাখে বটে। অকিঞ্চনের মুখ দেখলেই চিনতে পার?

শেখর। তা পারি। অতএব তোমার ঘরে আমার আনাগোনা চলবে না।

লক্ষেশ্বর। তোমার উপরে ভক্তি হচ্ছে। তাহলে আর বিলম্ব করো না –এইখান থেকে একটুখানি –

শেখর। আমি তফাতেই যাচ্ছি –তফাতে যাব বলেই বেরিয়েছি।

[প্রস্থান

লক্ষেশ্বর। “তফাতে যাব বলেই বেরিয়েছি!” লোকটা যখন কথা কয় সব ঝাপসা ঠেকে। রাজারা স্পষ্ট কথা সহ্য করতে পারে না, তাই বোধ হয় দায়ে পড়ে এই রকম অভ্যেস করেছে।

[প্রস্থান
পুঁথি প্রভৃতি লইয়া উপনন্দের প্রবেশ ও একটি কোণে লিখিতে বসা
ঠাকুরদাদা ও বালকগণের প্রবেশ
গান
আজ    ধানের খেতে রৌদ্রছায়ায়
            লুকোচুরি খেলা।
       নীল আকাশে কে ভাসালে
            সাদা মেঘের ভেলা।

একজন বালক। ঠাকুরদা, তুমি আমাদের দলে।