প্রজাপতির নির্বন্ধ
চতুর্থ পরিচ্ছেদ

আহারের পর শৈলবালা ডাকিল, “মুখুজ্যেমশায়।”

অক্ষয় অত্যন্ত ত্রস্তভাব দেখাইয়া কহিলেন, “আবার মুখুজ্যেমশায়! এই বালখিল্য মুনিদের ধ্যানভঙ্গ-ব্যাপারের মধ্যে আমি নেই।”

শৈলবালা। ধ্যানভঙ্গ আমরা করব। কেবল মুনিকুমারগুলিকে এই বাড়িতে আনা চাই।

অক্ষয় চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া কহিলেন, “সভাসুদ্ধ এইখানে উৎপাটিত করে আনতে হবে। যত দুঃসাধ্য কাজ সবই এই একটিমাত্র মুখুজ্যেমশায়কে দিয়ে?”

শৈলবালা হাসিয়া কহিল, “মহাবীর হবার ঐ তো মুশকিল। যখন গন্ধমাদনের প্রয়োজন হয়েছিল তখন নল-নীল-অঙ্গদকে তো কেউ পোঁছেও নি!”

অক্ষয় গর্জন করিয়া কহিলেন, “ওরে পোড়ারমুখী ত্রেতাযুগের পোড়ারমুখোকে ছাড়া আর কোনো উপমাও তোর মনে উদয় হল না? এত প্রেম!”

শৈলবালা কহিল, “হাঁ গো, এতই প্রেম!”

অক্ষয় ভৈরোঁতে গাহিয়া উঠিলেন–
                                “পোড়া মনে শুধু পোড়া মুখখানি জাগে রে!
                                এত আছে লোক, তবু পোড়া চোখে
                                আর কেহ নাহি লাগে রে!
আচ্ছা, তাই হবে! পঙ্গপাল কটাকে শিখার কাছে তাড়িয়ে নিয়ে আসব। তা হলে চট্‌ করে আমাকে একটা পান এনে দাও। তোমার স্বহস্তের রচনা!”

শৈল। কেন দিদির হস্তের–

অক্ষয়। আরে, দিদির হস্ত তো জোগাড় করেইছি, নইলে পাণিগ্রহণ কী জন্যে? এখন অন্য পদ্মহস্তগুলির প্রতি দৃষ্টি দেবার অবকাশ পাওয়া গেছে।

শৈল। আচ্ছা গো মশায়! পদ্মহস্ত তোমার পানে এমনি চুন মাখিয়ে দেবে যে, পোড়ার মুখ আবার পুড়বে।

অক্ষয় গাহিলেন–
                                যারে মরণ দশায় ধরে
                                সে যে শতবার করে মরে।
                                পোড়া পতঙ্গ যত পোড়ে তত
                                আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

শৈল। মুখুজ্যেমশায়, ও কাগজের গোলাটা কিসের?

অক্ষয়। তোমাদের সেই সভ্য হবার আবেদনপত্র এবং প্রবেশিকার দশ টাকার নোট পকেটে ছিল, ধোবা বেটা কেচে এমনি পরিষ্কার করে দিয়েছে, একটা অক্ষরও দেখতে পাচ্ছি নে। ও বেটা বোধ হয় স্ত্রীস্বাধীনতার ঘোরতর বিরোধী, তাই তোমার ঐ পত্রটা একেবারে আগাগোড়া সংশোধন করে দিয়েছে।