শেষের কবিতা

“কিচ্ছু খারাপ হয় নি, হাওয়া ঠিক আছে।”

অমিত তার কপালের চুলগুলো কপালের থেকে উপরের দিকে তুলে দিয়ে খুব দরদের সুর লাগিয়ে পড়ে গেল—

“সুন্দরী তুমি শুকতারা
         সুদূর শৈলশিখরান্তে,
শর্বরী যবে হবে সারা
           দর্শন দিয়ো দিক্‌ভ্রান্তে।

বুঝেছ বন্যা, চাঁদ ডাক দিয়েছে শুকতারাকে, সে আপনার রাত-পোহাবার সঙ্গিনীকে চায়। নিজের রাতটার ’পরে ওর বিতৃষ্ণা হয়ে গেছে।

ধরা যেথা অম্বরে মেশে
         আমি আধো-জাগ্রত চন্দ্র।
আঁধারের বক্ষের   ’পরে
         আধেক আলোকরেখারন্ধ্র।

ওর এই আধখানা জাগা, ঐ অল্প একটুখানি আলো, আঁধারটাকে সামান্য খানিকটা আঁচড়ে দিয়েছে। এই হল ওর খেদ। এই স্বল্পতার জালে ওকে জড়িয়ে ফেলেছে, সেইটে ছিঁড়ে ফেলবার জন্যে ও যেন সমস্ত রাত্রি ঘুমোতে ঘুমোতে গুমরে উঠছে। কী আইডিয়া! গ্র্যাণ্ড!

আমার আসন রাখে পেতে
         নিদ্রাগহন মহাশূন্য।
তন্ত্রী বাজাই স্বপনেতে,
         তন্দ্রা ঈষৎ করি ক্ষুণ্ন।

কিন্তু এমন হালকা করে বাঁচার বোঝাটা যে বড‌্‍ডো বেশি; যে নদীর জল মরেছে তার মন্থর স্রোতের ক্লান্তিতে জঞ্জাল জমে, যে স্বল্প সে নিজেকে বইতে গিয়ে ক্লিষ্ট হয়। তাই ও বলছে—

মন্দচরণে চলি পারে,
         যাত্রা হয়েছে মোর সাঙ্গ।
সুর থেমে আসে বারে বারে,
         ক্লান্তিতে আমি অবশাঙ্গ।

কিন্তু এই ক্লান্তিতেই কি ওর শেষ। ওর ঢিলে তারের বীণাকে নতুন করে বাঁধবার আশা ও পেয়েছে, দিগন্তের ওপারে কার পায়ের শব্দ ও যেন শুনল–

সুন্দরী ওগো শুকতারা,
         রাত্রি না যেতে এসো তূর্ণ
স্বপ্নে যে বাণী হল হারা
         জাগরণে করো তারে পূর্ণ।

উদ্ধারের আশা আছে, কানে আসছে জাগ্রত বিশ্বের বিপুল কলরব, সেই মহাপথের দূতী তার প্রদীপ হাতে করে এল বলে–