শেষের কবিতা
রজনীর শুভ্র অবসানে। কিছু আর নাই বাকি,
নাইকো প্রার্থনা, নাই প্রতি মুহূর্তের দৈন্যরাশি,
নাই অভিমান, নাই দীন কান্না, নাই গর্ব-হাসি,
নাই পিছু ফিরে দেখা। শুধু সে মুক্তির ডালিখানি
ভরিয়া দিলাম আজি আমার মহৎ মৃত্যু আনি।”

“বন্যা, বড়ো অন্যায় করলে। আজকের দিনে তোমার মুখে বলবার কথা এ নয়, কিছুতেই নয়। কেন এটা তোমার মনে এল। তোমার এ কবিতা এখনই ফিরিয়ে নাও।”

“ভয় কিসের মিতা। এই আগুনে-পোড়া প্রেম, এ সুখের দাবি করে না, এ নিজে মুক্ত বলেই মুক্তি দেয়, এর পিছনে ক্লান্তি আসে না, ম্লানতা আসে না— এর চেয়ে আর কিছু কি দেবার আছে।”

“কিন্তু আমি জানতে চাই, এ কবিতা তুমি পেলে কোথায়।”

“রবি ঠাকুরের।”

“তার তো কোনো বইয়ে এটা দেখি নি।”

“বইয়ে বেরোয় নি।”

“তবে পেলে কী করে।”

“একটি ছেলে ছিল, সে আমার বাবাকে গুরু বলে ভক্তি করত। বাবা দিয়েছিলেন তাকে তার জ্ঞানের খাদ্য, এ দিকে তার হৃদয়টিও ছিল তাপস। সময় পেলেই সে যেত রবি ঠাকুরের কাছে, তাঁর খাতা থেকে মুষ্টিভিক্ষা করে আনত।”

“আর নিয়ে এসে তোমার পায়ে দিত।”

“সে সাহস তার ছিল না। কোথাও রেখে দিত, যদি আমার দৃষ্টিতে পড়ে, যদি আমি তুলে নিই।”

“তাকে দয়া করেছ?”

“করবার অবকাশ হল না। মনে মনে প্রার্থনা করি, ঈশ্বর যেন তাকে দয়া করেন।”

“যে কবিতাটি আজ তুমি পড়লে, বেশ বুঝতে পারছি এটা সেই হতভাগারই মনের কথা।”

“হাঁ, তারই কথা বইকি।”

“তবে তোমার কেন আজ ওটা মনে পড়ল?”

“কেমন করে বলব। ঐ কবিতাটির সঙ্গে আর-এক টুকরো কবিতা ছিল, সেটাও আজ আমার কেন মনে পড়ছে ঠিক বলতে পারি নে—

সুন্দর, তুমি চক্ষু ভরিয়া
         এনেছ অশ্রুজল।
এনেছ তোমার বক্ষে ধরিয়া
          দুঃসহ হোমানল।
দুঃখ যে তার উজ্জ্বল হয়ে উঠে,
মুগ্ধ প্রাণের আবেশ-বন্ধ টুটে,
এ তাপে শ্বসিয়া উঠে বিকশিয়া