শারদোৎসব

উপনন্দ। ভুল থাকলে চলবে না।

দ্বিতীয় বালক। কিচ্ছু ভুল থাকবে না।

প্রথম বালক। এ বেশ মজা হচ্ছে। পুঁথি শেষ করব তবে ছাড়ব।

দ্বিতীয় বালক। নইলে ওঠা হবে না।

তৃতীয় বালক। কী বল ঠাকুর্দা, আজ লেখা শেষ করে দিয়ে তবে উপনন্দকে নিয়ে নৌকো-বাচ করতে যাব। বেশ মজা!

ঠাকুরদাদা।

গান
সিন্ধু ভৈরবী। তেওরা

আনন্দেরই সাগর থেকে এসেছে আজ বান

দাঁড় ধ’রে আজ বোস্‌ রে সবাই, টান্‌ রে সবাই টান্‌।

বোঝা যত বোঝাই করি

করব রে পার দুখের তরী,

ঢেউয়ের ’পরে ধরব পাড়ি—

যায় যদি যাক প্রাণ।

কে ডাকে রে পিছন হতে, কে করে রে মানা?

ভয়ের কথা কে বলে আজ, ভয় আছে সব জানা।

কোন্‌ শাপে কোন্‌ গ্রহের দোষে

সুখের ডাঙায় থাকব বসে?—

পালের রশি ধরব কষি,

চলব গেয়ে গান।

সন্ন্যাসী। ঠাকুর্দা!

ঠাকুরদাদা। ( জিভ কাটিয়া ) প্রভু, তুমিও আমাকে পরিহাস করবে?

সন্ন্যাসী। তুমি যে জগতে ঠাকুর্দা হয়েই জন্মগ্রহণ করেছ, ঈশ্বর সকলের সঙ্গেই তোমার হাসির সম্বন্ধ পাতিয়ে দিয়ে বসেছেন, সে তো তুমি লুকিয়ে রাখতে পারবে না! ছোটো ছোটো ছেলেগুলির কাছেও ধরা পড়েছ, আর আমাকেই ফাঁকি দেবে?

ঠাকুরদাদা। ছেলে-ভোলানোই যে আমার কাজ—তা ঠাকুর, তুমিও যদি ছেলের দলেই ভিড়ে যাও তা হলে কথা নেই। তা, কী আজ্ঞা কর!

সন্ন্যাসী। আমি বলছিলেম ওই-যে গানটা গাইলে, ওটা আজ ঠিক হল না। দুঃখ নিয়ে ওই অত্যন্ত টানাটানির কথাটা, ওটা আমার কানে ঠিক লাগছে না। দুঃখ তো জগৎ ছেয়েই আছে, কিন্তু চার দিকে চেয়ে দেখো-না—টানাটানির তো কোনো চেহারা দেখা যায় না। তাই এই শরৎ-প্রভাতের মান রাখবার জন্যে আমাকে আর-একটা গান গাইতে হল।

ঠাকুরদাদা। তোমাদের সঙ্গ এইজন্যই এত দামি; ভুল করলেও ভুলকে সার্থক করে তোল।