রাজা
গান
ভোর হল বিভাবরী, পথ হল অবসান।
শুন ওই লোকে লোকে উঠে আলোকেরই গান।
        ধন্য হলি ওরে পান্থ,
        রজনী জাগরক্লান্ত,
ধন্য হল মরি মরি ধুলায় ধূসর প্রাণ।
        বনের কোলের কাছে
        সমীরণ জাগিয়াছে।
        মধুভিক্ষু সারে সারে
        আগত কুঞ্জের দ্বারে।
        হল তব যাত্রা সারা,
        মোছ মোছ অশ্রুধারা,
লজ্জাভয় গেল ঝরি, ঘুচিল রে অভিমান॥
ঠাকুরদার প্রবেশ

ঠাকুরদা। ভোর হল দিদি, ভোর হল।

সুদর্শনা। তোমাদের আশীর্বাদে পৌঁচেছি ঠাকুরদা, পৌঁচেছি।

ঠাকুরদা। কিন্তু আমাদের রাজার রকম দেখেছ? রথ নেই, বাদ্য নেই, সমারোহ নেই।

সুদর্শনা। বল কী, সমরোহ নেই? ঐ-যে আকাশ একেবারে রাঙা, ফুলগন্ধের অভ্যর্থনায় বাতাস একেবারে পরিপূর্ণ।

ঠাকুরদা। তা হোক। আমাদের রাজা যত নিষ্ঠুর হোক, আমরা তো তেমন কঠিন হতে পারি নে— আমাদের যে ব্যথা লাগে। এই দীনবেশে তুমি রাজভবনে যাচ্ছ, এ কি আমরা সহ্য করতে পারি। একটু দাঁড়াও, আমি ছুটে গিয়ে তোমার রানীর বেশটা নিয়ে আসি।

সুদর্শনা। না না না! সে রানীর বেশ তিনি আমাকে চিরদিনের মতো ছাড়িয়েছেন, সবার সামনে আমাকে দাসীর বেশ পরিয়েছেন— বেঁচেছি, বেঁচেছি। আমি আজ তাঁর দাসী— যে-কেউ তাঁর আছে, আমি আজ সকলের নীচে।

ঠাকুরদা। শত্রুপক্ষ তোমার এ দশা দেখে পরিহাস করবে সেইটে আমাদের অসহ্য হয়।

সুদর্শনা। শত্রুপক্ষের পরিহাস অক্ষয় হোক, তারা আমার গায়ে ধুলো দিক। আজকের দিনের অভিসারে সেই ধুলোই যে আমার অঙ্গরাগ।

ঠাকুরদা। এর উপরে আর কথা নেই। এখন আমাদের বসন্ত-উৎসবের শেষ খেলাটাই চলুক— ফুলের রেণু এখন থাক্‌, দক্ষিনে হাওয়ায় এবার ধুলো উড়িয়ে দিক। সকলে মিলে আজ ধূসর হয়ে প্রভুর কাছে যাব। গিয়ে দেখব তার গায়েও ধুলো মাখা। তাকে বুঝি কেউ ছাড়ে মনে করছ? যে পায়, তার গায়ে মুঠো মুঠো ধুলো দেয় যে! সে ধুলো সে ঝেড়েও ফেলে না।

কাঞ্চী। ঠাকুরদা, তোমাদের এই ধুলোর খেলায় আমাকে ভুলো না। আমার এই রাজবেশটাকে এমনি মাটি করে নিয়ে যেতে হবে যাতে একে আর চেনা না যায়।