রাজা
মানবার জন্যে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছি, তার আর দেখাই নেই।

ঠাকুরদা। তা হোক, সে যত বড়ো রাজাই হোক, হার-মানার কাছে তাকে হার মানতেই হবে। কিন্তু রাজন্‌, রাত্রে বেরিয়েছ যে?

কাঞ্চী। ঐ লজ্জাটুকু এখনো ছাড়তে পারি নি। কাঞ্চীর রাজা থালায় মুকুট সাজিয়ে তোমার রাজার মন্দির খুঁজে বেড়াচ্ছে এই যদি দিনের আলোয় লোকে দেখে তা হলে যে তারা হাসবে।

ঠাকুরদা। লোকের ঐ দশা বটে। যা দেখে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে যায়, তাই দেখেই বাঁদররা হাসে।

কাঞ্চী। কিন্তু ঠাকুরদা, তোমার এ কী কাণ্ড! সেই উৎসবের ছেলেদের এখানেও জুটিয়ে এনেছ? কিন্তু সেখানে যারা তোমার পিছে পিছে ঘুরত তাদের দেখছি নে বড়ো।

ঠাকুরদা। আমার শম্ভু-সুধনের দল? তারা এবার লড়াইয়ে মরেছে।

কাঞ্চী। মরেছে?

ঠাকুরদা। হাঁ, তারা আমাকে বললে, ঠাকুরদা, পণ্ডিতরা যা বলে আমরা কিছুই বুঝতে পারি নে, তুমি যে গান গাও তার সঙ্গেও গলা মেলাতে পারি নে, কিন্তু একটা কাজ আমরা করতে পারি— আমরা মরতে পারি। আমাদের যুদ্ধে নিয়ে যাও, জীবনটা সার্থক করে আসি। তা, যেমন কথা তেমন কাজ। সকলের আগে গিয়ে তারা দাঁড়াল, সকলের আগেই তারা প্রাণ দিয়ে বসে আছে।

কাঞ্চী। সিধে রাস্তা ধরে সব বুদ্ধিমানদের চেয়ে এগিয়ে গেল আর-কি। এখন এই ছেলের দল নিয়ে কী বাল্যলীলাটা চলছে।

ঠাকুরদা। এবারকার বসন্ত-উৎসবটা নানা ক্ষেত্রে নানারকম হয়ে গেল, তাই সকল পালার মধ্যে দিয়ে এদের ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। সেদিন বাগানের মধ্যে দিয়ে দিব্যি লাল হয়ে উঠেছিল— রণক্ষেত্রেও মন্দ জমে নি। সে তো চুকল, আজ আবার আমাদের বড়ো রাস্তার বড়োদিন। আজ ঘরের মানুষদের পথে বের করবার জন্যে দক্ষিণ-হাওয়ার মতো দলবল নিয়ে বেরিয়েছি। ধর্ তো রে ভাই, তোদের সেই দরজায় ঘা দেবার গানটা ধর্।

গান

আজি    বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।

তব     অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে

          কোরো না বিড়ম্বিত তারে।

আজি    খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,

আজি    ভুলিয়ো আপন-পর ভুলিয়ো,

এই     সংগীতমুখরিত গগনে

তব     গন্ধ তরঙ্গিয়া তুলিয়ো।

এই     বাহির-ভুবনে দিশা হারায়ে

দিয়ো    ছড়ায়ে মাধুরী ভারে ভারে।

অতি    নিবিড় বেদনা বনমাঝে রে

আজি    পল্লবে পল্লবে বাজে রে।

দূরে    গগনে কাহার পথ চাহিয়া