শৈশবসঙ্গীত
    বাজাও সেদিনকার গান,
আঁধার মরমমাঝে জেগে ওঠে প্রতিধ্বনি,
    কেঁদে ওঠে আকুল পরাণ!
হা দেবি, তেমনি যদি থাকিতাম চিরকাল!
    না ফুরাত সেই ছেলেবেলা,
হৃদয় তেমনি ভাবে করিত গো থল থল,
    মরমেতে তরঙ্গের খেলা!
ঘুমভাঙ্গা আঁখি মেলি যখন প্রফুল্ল উষা
    ফেলে ধীরে সুরভিনিশ্বাস,
ঢেউগুলি জেগে ওঠে পুলিনের কানে কানে
    কহে তার মরমের আশ।
তেমনি উঠিত হৃদে প্রশান্ত সুখের ঊর্ম্মি
    অতি-মৃদু অতি-সুশীতল—
বহিত সুখের শ্বাস, নাহিয়া শিশিরজলে
    ফেলে যথা কুসুমসকল।
অথবা যেমন যবে প্রশান্ত সায়াহ্নকালে
    ডুবে সূর্য সমুদ্রের কোলে,
বিষণ্ণ কিরণ তার শ্রান্ত বালকের মত
    প’ড়ে থাকে সুনীল সলিলে।
নিস্তব্ধ সকল দিক, একটি ডাকে না পাখী,
    একটুও বহে না বাতাস,
তেমনি কেমন এক গম্ভীর বিষণ্ন সুখ
    হৃদয়ে তুলিত দীর্ঘশ্বাস।
এইরূপ কত কি যে হৃদয়ের ঢেউ-খেলা
    দেখিতাম বসিয়া বসিয়া,
মরমের ঘুমঘোরে কত দেখিতাম স্বপ্ন
    যেত দিন হাসিয়া-খুসিয়া।
বনের পাখীর মত অনন্ত আকাশতলে
    গাহিতাম অরণ্যের গান—
আর কেহ শুনিত না, প্রতিধ্বনি জগিত না,
    শূন্যে মিলাইয়া যেত তান।