বন-ফুল
শুনেছ কি বনদেবী— করুণা-আলয়—
বালিকা তোমার কোলে করিত ক্রন্দন,
সে নাকি মরিতে আজ করেছে মনন?

বনের কুসুমকলি
তপনতাপনে জ্বলি
শুকায়ে মরিবে নাকি করেছে মনন!
শীতল শিশিরধারে
জীয়াও জীয়াও তারে
বিশুষ্ক হৃদয়মাঝে বিতরি জীবন!

উদিল প্রদোষতারা সাঁঝের আঁচলে—
এখনি মুদিবে আঁখি?
বারণ করিবে না কি?
এখনি নীরদকোলে মিশাবে কি বোলে?

অনন্ত তুষারমাঝে দাঁড়ায়ে সুন্দরী!
মোহস্বপ্ন গেছে ছুটে—
হেরিল চমকি উঠে
চৌদিকে তুষাররাশি শিখর আবরি!

উচ্চ হোতে উচ্চ গিরি
জলদে মস্তক ঘিরি
দেবতার সিংহাসন করিছে লোকন!
বনবালা থাকি থাকি
সহসা মুদিল আঁখি
কাঁপিয়া উঠিল দেহ! কাঁপি উঠে মন!

অনন্ত আকাশমাঝে একেলা কমলা!
অনন্ত তুষারমাঝে একেলা কমলা!
সমুচ্চ শিখর-পরে একেলা কমলা!
আকাশে শিখর উঠে
চরণে পৃথিবী লুটে—
একেলা শিখর-পরে বালিকা কমলা!
ওই— ওই— ধর্‌— ধর্‌— পড়িল বালিকা!
ধবলতুষারচ্যুতা পড়িল বিহ্বল!—
খসিল পাদপ হোতে কুসুমকলিকা!
খসিল আকাশ হোতে তারকা উজ্জ্বল!

প্রশান্ত তটিনী চলে কাঁদিয়া কাঁদিয়া!
ধরিল বুকের পরে কমলাবালায়!
উচ্ছ্বাসে সফেন জল উঠিল নাচিয়া!
কমলার দেহ ওই ভেসে ভেসে যায়!
কমলার দেহ বহে সলিল-উচ্ছ্বাস!
কমলার জীবনের হোলো অবসান!
ফুরাইল কমলার দুখের নিঃশ্বাস,
জুড়াইল কমলার তাপিত পরাণ!
কল্পনা! বিষাদে দুখে গাইনু সে গান!
কমলার জীবনের হোলো অবসান!
দীপালোক নিভাইল প্রচণ্ড পবন!
কমলার— প্রতিমার হল বিসর্জ্জন!