বন-ফুল
জীবধাত্রী
বসুন্ধরে!
তোমার কোলের ‘পরে
অনাথা বালিকা মোর করিনু অর্পণ!
দিনকর!
নিশাকর!
আহা এ বালার ‘পর
তোমাদের স্নেহদৃষ্টি করিও বর্ষণ!
শুন সব দিক্বালা! বালিকা না পায় জ্বালা
তোমরা জননীস্নেহে করিও পালন!
শৈলবালা!
বিশ্বমাতা!
জগতের স্রষ্টা পাতা!
শত শত নেত্রবারি সঁপি পদতলে—
বালিকা অনাথা
বোলে
স্থান দিও তব কোলে,
আবৃত করিও এরে স্নেহের আঁচলে!
মুছ মা গো
অশ্রুজল!
আর কি কহিব বলো!
অভাগা পিতারে ভোলো জন্মের মতন!
আটকি আসিছে স্বর!—
অবসন্ন কলেবর।
ক্রমশ মুদিয়া, মা গো, আসিছে নয়ন!
মুষ্টিবদ্ধ করতল, শোণিত হইছে জল,
শরীর হইয়া আসে শীতল পাষাণ!
এই— এই
শেষবার—
কুটিরের চারি ধার
দেখে লই! দেখে লই মেলিয়া নয়ান!
শেষবার নেত্র
ভোরে
এই দেখে লই তোরে
চিরকাল তরে আঁখি হইবে মুদ্রিত!
সুখে থেকো চিরকাল!— সুখে থেকো চিরকাল!
শান্তির কোলেতে বালা থাকিও নিদ্রিত!’
স্তবধ হৃদয়োচ্ছ্বাস! স্তবধ হইল শ্বাস!
স্তবধ লোচনতারা! স্তবধ শরীর!
বিষম শোকের
জ্বালা—
মুর্চ্ছিয়া পড়িল বালা,
কোলের উপরে আছে জনকের শির!
গাইল নির্ঝরবারি বিষাদের গান,
শাখার প্রদীপ ধীরে হইল নির্বাণ!