পিত্রার্কা ও লরা

এক তিল অভাগারে দেয় নি আরাম,

এক মুহূর্তের তরে দেয় নি বিরাম!

যে গ্রহ উঠিয়া কেন উজলে বিমান

আমার যে দশা তাহা রহিল সমান!

দগ্ধ হয়ে মর্মভেদী মর্ম-যন্ত্রণায়

এ বিলাপ করিতেছি, দেখিতেছি হায়–

অতি ধীর পদক্ষেপে স্বাধীনতা সুখে

হল-যুগ-মুক্ত বৃষ ধায় গৃহ-মুখে!

আমি কি হব না মুক্ত এ বিষাদ হতে,

সদাই ভাসিবে আঁখি অশ্রু-জল-স্রোতে।

তার সেই মুখপানে চাহিল যখন

কী খুঁজিতেছিল মোর নয়ন তখন?

এক দৃষ্টে চাহিনু স্বর্গীয় মুখপানে

সৌন্দর্য অমনি তার বসি গেল প্রাণে

কিছুতে সে মুছিবে না যত দিনে আসি

মৃত্যু এই জীর্ণ-দেহ না ফেলে বিনাশি!

এই বলিয়া আমরা এই প্রবন্ধের উপসংহার করি যে, পিত্রার্কা তাঁহার সমসাময়িক লোকদিগের নিকট হইতে যেমন আদর পাইয়াছিলেন, এমন বোধ হয় আর কোনো কবি পান নাই। একদিনেই তিনি প্যারিস ও রোম হইতে লরেল-মুকুট গ্রহণ করিবার জন্য আহূত হন। তিনি নানা দেশে ভ্রমণ করেন, এবং যে দেশে গিয়াছিলেন সেইখানেই তিনি সমাদৃত হইয়াছিলেন। নৃপতিরা তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে ইচ্ছা করিতেন। তিনি যে রাজসভায় বাস করিতেন, কখনো তাঁহাকে অধীনভাবে বাস করিতে হয় নাই, তিনি যেন রাজ-পরিবারমধ্যে ভুক্ত হইয়া থাকিতেন। লরার নামকে তিনি অমরত্ব প্রদান করিলেন বলিয়া তিনি মনে মনে যে সন্তোষময় গর্ব অনুভব করিতেন, তাঁহার সে গর্ব সার্থক হইল। পাঁচশত বৎসরের কালস্রোত পৃথিবীর স্মৃতিপট হইতে লরার নাম মুছিয়া ফেলিতে পারে নাই। তাঁহার নামের সহিতই চিরকাল লরার নাম যুক্ত হইয়া থাকিবে; পিত্রার্কাকে স্মরণ করিলেই লরাকে মনে পড়িবে, লরাকে স্মরণ করিলেই পিত্রার্কাকে মনে পড়িবে।