বিয়াত্রিচে, দান্তে ও তাঁহার কাব্য

অনন্ত জ্ঞান ও প্রেম স্বর্গীয় ক্ষমতা-

আমারে পোষণ করা কার্য তাহাদের!

মোর পূর্বে আর কিছু হয় নি সৃজিত-

অনন্ত-পদার্থ ছাড়া, তাই কহিতেছি

হেথায় অনন্ত কাল দহিতেছি আমি।

‘হে প্রবেশি, ত্যজি স্পৃহা, প্রবেশ এ দেশে।’

কবি বর্জিল ভীত দান্তেকে সান্ত্বনা করিয়া এক স্থানে লইয়া গেলেন–সেখানে দীর্ঘশ্বাস, আর্তনাদ, ক্রন্দন, বিলাপ-

তোরকা-অবিদ্ধ শূন্য করিছে ধ্বনিত,

শুনিয়া, প্রবেশি সেথা উঠিনু কাঁদিয়া।

নানাবিধ ভাষা আর ভয়ানক কথা,

যন্ত্রণার আর্তনাদ, ক্রোধের চীৎকার

করতালি–কঠোর ও ভগ্নকণ্ঠ-ধ্বনি-

নিরেট সে আঁধারের চার দিক ঘেরি

ঘূর্ণ-বায়ে রেণুসম ফিরিছে সতত!

এইরূপে আরম্ভ করিয়া কাব্যের প্রথম খণ্ড, অর্থাৎ ইনফর্নো, অর্থাৎ নরক–ক্রমাগত নরকের বর্ণনা; পরে পর্গেটরি–অর্থাৎ যাহাদের পরিত্রাণ পাইবার আশা আছে তাহাদের বাসভূমি–পরে স্বর্গ। ক্রমাগত একই পদার্থের বর্ণনার বিবরণ পাঠকদিগের নিদ্রাকর্ষক হইবে, এই নিমিত্ত তাহা হইতে বিরত হইলাম, পর্গেটরি কাব্যের শেষভাগে বিয়াত্রিচের সহিত কবির সাক্ষাৎ হইল।–বর্জিল ও দান্তে উভয়েই বিস্ময়ে দেখিলেন একটি আশ্চর্য রথে বিয়াত্রিচে আসিতেছেন। সুরবালারা তাঁহার চারি দিকে এমন পুষ্প-বৃষ্টি করিতেছেন যে, তাঁহার আকার অতি অস্ফুটভাবে দেখা যাইতেছে, দান্তে সে পুষ্পরাশির মধ্যে তাঁহাকে ভালো করিয়া দেখিতে পান নাই, চিনিতেও পারেন নাই–তিনি কহিতেছেন,

আঁখি মোর দেখে তাঁরে পারে নি চিনিতে

তবু তাঁর দেহ হতে এমন একটি

বিকীরিত হতেছিল শুভ্র-পূণ্য-জ্যোতি,

তাহার পরশে যেন পুরাতন প্রেম

হৃদয়ে আমার পুন উঠিল জাগিয়া।

সেই পুরাতন স্বপ্ন কত শত দিন

যে স্বপ্নে হৃদয় মোর আছিল মগন-

যখনি উঠিল জাগি স্বর্গীয় কিরণে,

অমনি আকুল হয়ে ফিরিয়া ধাইনু।

কবি বার্জিলের পানে, শিশু সে যেমন

ভয় কিংবা শোক-ভারে হলে বিচলিত,

অমনি মায়ের বুকে যায় লুকাবারে!