নামের খেলা

আজ রবিবার। তার থিয়েটারবিলাসী বন্ধু থিয়েটারওয়ালাদের কাছে অভিমত আনতে গেছে। তার সে পথ চেয়ে রইল।

রবিবারে তার ভাগ্নেরও ছুটি। আজ সকাল থেকে সে এক খেলা বের করেছে, অন্যমনস্ক হয়ে মামা তা লক্ষ্য করে নি।

ওদের ইস্কুলের পাশে ছাপাখানা আছে। সেখান থেকে ভাগ্নে নিজের নামের কয়েকটা সীসের অক্ষর জুটিয়ে এনেছে। তার কোনোটা ছোটো, কোনোটা বড়ো।

যে-কোনো বই পায় এই সীসের অক্ষরে কালি লাগিয়ে তাতে নিজের নাম ছাপাচ্ছে। মামাকে আশ্চর্য করে দিতে হবে।


আশ্চর্য করে দিলে। মামা এক সময়ে বসবার ঘরে এসে দেখে, ছেলেটি ভারি ব্যস্ত।

“কী কানাই, কী করছিস।”

ভাগ্নে খুব আগ্রহ করেই দেখালে সে কী করছে। কেবল তিনটিমাত্র বই নয়, অন্তত পঁচিশখানা বইয়ে ছাপার অক্ষরে কানাইয়ের নাম।

এ কী কাণ্ড। পড়াশুনোর নাম নেই, ছোঁড়াটার কেবল খেলা। আর, এ কী রকম খেলা।

কানাইয়ের বহু দুঃখে জোটানো নামের অক্ষরগুলি হাত থেকে সে ছিনিয়ে নিলে।

কানাই শোকে চীৎকার করে কাঁদে, তার পরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে, তার পরে থেকে থেকে দমকায় দমকায় কেঁদে ওঠে— কিছুতেই সান্ত্বনা মানে না।

বুড়ি ঝি ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলে, “কী হয়েছে, বাবা।”

কানাই বললে, “আমার নাম।”

মা এসে বললে, “কী রে কানাই, কী হয়েছে।”

কানাই রুদ্ধকণ্ঠে বললে, “আমার নাম।”

ঝি লুকিয়ে তার হাতে আস্ত একটি ক্ষীরপুলি এনে দিলে; মাটিতে ফেলে দিয়ে সে বললে, “আমার নাম।”

মা এসে বললে, “কানাই, এই নে তোর সেই রেলগাড়িটা।”

কানাই রেলগাড়ি ঠেলে ফেলে বললে, “আমার নাম।”


থিয়েটার থেকে বন্ধু এল।

মামা দরজার কাছে ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে, “কী হল।”

বন্ধু বললে, “ওরা রাজি হল না।”

অনেক ক্ষণ চুপ করে থেকে মামা বললে, “আমার সর্বস্ব যায় সেও ভালো, আমি নিজে থিয়েটার খুলব।”

বন্ধু বললে, “আজ ফুটবল ম্যাচ দেখতে যাবে না? ”

ও বললে, “না, আমার জ্বরভাব।”

বিকেলে মা এসে বললে, “খাবার ঠাণ্ডা হয়ে গেল।”