মীনু
লাগল, যেন খাজনা আদায়ের জন্যে বর্গির পেয়াদা।

মীনু দাইকে বললে, “শীঘ্র ঐ ঠাকুরকে একবার ডেকে আন্‌।”

ব্রাহ্মণ আসতেই মীনু তাকে প্রণাম করে বললে, “ঠাকুর, ফুল নিচ্ছ কার জন্যে।”

ব্রাহ্মণ বললে, “দেবতার জন্যে।”

মীনু বললে, “দেবতা তো ঐ ফুল স্বয়ং আমাকে পাঠিয়েছেন।”

“তোমাকে! ”

“হাঁ, আমাকে। তিনি যা দিয়েছেন সে তো ফিরিয়ে নেবেন ব’লে দেন নি।”

ব্রাহ্মণ বিরক্ত হয়ে চলে গেল।

পরের দিন ভোরে আবার সে যখন গাছ নাড়া দিতে শুরু করলে তখন মীনু তার দাইকে বললে, “ও দাই, এ তো আমি চোখে দেখতে পারি নে। পাশের ঘরের জানলার কাছে আমার বিছানা করে দে।”


পাশের ঘরের জানলার সামনে রায়চৌধুরীদের চৌতলা বাড়ি। মীনু তার স্বামীকে ডাকিয়ে এনে বললে, “ঐ দেখো, দেখো, ওদের কী সুন্দর ছেলেটি। ওকে একটিবার আমার কোলে এনে দাও-না।”

স্বামী বললে, “গরিবের ঘরে ছেলে পাঠাবে কেন।”

মীনু বললে, “শোনো একবার! ছোটো ছেলের বেলায় কি ধনী-গরিবের ভেদ আছে। সবার কোলেই ওদের রাজসিংহাসন।”

স্বামী ফিরে এসে খবর দিলে, “দরোয়ান বললে, বাবুর সঙ্গে দেখা হবে না।”

পরের দিন বিকেলে মীনু দাইকে ডেকে বললে, “ঐ চেয়ে দেখ্‌, বাগানে একলা বসে খেলছে। দৌড়ে যা, ওর হাতে এই সন্দেশটি দিয়ে আয়।”

সন্ধ্যাবেলায় স্বামী এসে বললে, “ওরা রাগ করেছে।”

“কেন, কী হয়েছে।”

“ওরা বলেছে, দাই যদি ওদের বাগানে যায় তো পুলিশে ধরিয়ে দেবে।”

এক মুহূর্তে মীনুর দুই চোখ জলে ভেসে গেল। সে বললে, “আমি দেখেছি, দেখেছি, ওর হাত থেকে ওরা আমার সন্দেশ ছিনিয়ে নিলে। নিয়ে ওকে মারলে। এখানে আমি বাঁচব না। আমাকে নিয়ে যাও।”