চণ্ডিদাস ও বিদ্যাপতি
চণ্ডিদাস হৃদয়ের তুলাদণ্ডে মাপিয়া দেখিলেন, প্রাণের অপেক্ষা প্রেম অধিক হইল। এই তো জগৎগ্রাসী, প্রাণ হইতে গুরুতর প্রেম। ইহা আবার নিত্যই বাড়িতেছে, বাড়িবার স্থান নাই, তথাপি বাড়িতেছে –

নিতই নূতন পিরীতি দুজন,

      তিলে তিলে বাঢ়ি যায়।

ঠাঞি নাহি পায় তথাপি বাড়ায়,

      পরিণামে নাহি খায়!

ইহার আর পরিণাম নাই।

এত বড় প্রেমের ভাব চণ্ডিদাস ব্যতীত আর কোন্‌ প্রাচীন কবির কবিতায় পাওয়া যায়? বিদ্যাপতির সমস্ত পদাবলীতে একটি মাত্র কবিতা আছে, চণ্ডিদাসের কবিতার সহিত যাহার তুলনা হইতে পারে। তাহা শতবার উদ্ধৃত হইয়াছে, আবার উদ্ধৃত করি। –

      সখি রে, কি পুছসি অনুভব মোয়!

সোই পিরীতি অনুরাগ বাখানিতে

      তিলে তিলে নূতন হোয়।

জনম অবধি হম রূপ নেহারনু

      নয়ন না তিরপিত ভেল

সোই মধুর বোল শ্রবণ হি শুননু

      শ্রুতিপথে পরশ না গেল।

কত মধু-যামিনী রভসে গোয়ায়নু

      না বুঝনু কৈছন কেল,

লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে রাখনু

      তবু হিয়ে জুড়ন না গেল।

যত যত রসিকজন রস-অনুগমন –

      অনুভব কহে, না পেখে!

বিদ্যাপতি কহে প্রাণ জুড়াইতে

      লাখে না মিলল একে।

বিদ্যাপতির অনেক স্থলে ভাষার মাধুর্য, বর্ণনার সৌন্দর্য আছে, কিন্তু চণ্ডিদাসের নূতনত্ব আছে, ভাবের মহত্ত্ব আছে, আবেগের গভীরতা আছে। যে বিষয়ে তিনি লিখিয়াছেন, তাহাতে তিনি একেবারে মগ্ন হইয়া লিখিয়াছেন। তিনি নিজের রজকিনী প্রণয়িনী সম্বন্ধে যাহা লিখিয়াছেন তাহা উদ্ধৃত করি। –

      শুন রজকিনী রামি

ও দুটি চরণ       শীতল জানিয়া

      শরণ লইনু আমি।

তুমি বেদ-বাগিনী,      হরের ঘরণী,

      তুমি সে নয়নের তারা,