ললাটের লিখন
নইলে শান্তি পাবে না আমার হাতে। ”

 

পরের দিন সোমশংকর এল। বাঁশি বললে, “ তুমি যে। ”

“ নিমন্ত্রণ করতে এসেছি। জানি অন্য পক্ষ থেকে তোমাকে নিমন্ত্রণ করবে না। কিন্তু আমার দিক থেকে কোনো সংকোচ নেই। ”

“ কেন নেই?”

“ একদিন আমি তোমাকে যা দিয়েছি আর তুমি আমাকে যা দিয়েছ এ বিবাহে তাকে কিছুমাত্র স্পর্শ করবে না তা তুমি জান। ”

“ তবে বিবাহ করতে যাচ্ছ কেন? ”

“ সে কথা বুঝতে যদি নাও পার, তবু আমার উপর দয়া কোরো। ”

“ নাই-বা বুঝলুম, তুমি বলো। ”

“ সন্ন্যাসীর কাছ থেকে যে ব্রত নিয়েছি বোঝাতে পারব না সে, আমার ভালোবাসার চেয়ে বড়ো। তাকে সম্পন্ন করতেই হবে বাঁচি আর মরি। ”

“ আমাকে সঙ্গে নিয়ে সম্পন্ন হতে পারত না? ”

“ যদি পারত তবে বাধা ঘটত না। তুমি নিজেকে ভুল বোঝাও না, তাই জানি, তুমি নিশ্চিত জানো তোমার ভালোবাসা টলিয়ে দিল আমাকে কেন্দ্র থেকে। তোমার কাছে আমি দুর্বল। যে দুঃসাধ্য কর্মে সুষমার সঙ্গে সন্ন্যসী আমাকে মিলিয়েছেন, সেখানে আমাদের বিচলিত হবার অবকাশ নেই। সেখানে ভালোবাসার প্রবেশপথ বন্ধ। ”

অশ্রু গোপন করার জন্যে চোখ নিচু করে বাঁশরি বললে, “ এখনো সস্পূর্ণ করে বলো নি, কেন এলে আজ আমার এখানে? ”

“ আমার ভালোবাসার কিছু চিহ্ন রেখে যাচ্ছি তোমার কাছে, ফিরিয়ে দিতে পারবে না। ”

ডুব সাঁতার দিয়ে জল থেকে তুলে এনেছিল, সেই কন্ঠী, সেই ব্রেসলেট, সেই ব্রোচ। ধরলে বাঁশরির সামনে। বাঁশরি বললে, “ মনে করেছিলাম হারিয়েছে, ফিরে পেয়ে আরো বেশি করে পেলুম। নিজের হাতে পরিয়ে দাও আমাকে। ”

সোমশংকর একে-একে গয়নাগুলি পরিয়ে দিলে যত্ন করে। বাঁশরি বললে, “ শক্ত আমার প্রাণ, তোমার কাছেও কোনো দিন কেঁদেছি বলে মনে পড়ে না। আজকে যদি কাঁদি কিছু মনে কোরো না। ” এই বলে মাথা রাখল সোমশংকরের বুকের উপর।

 

বিবাহের আগের দিন সন্ধ্যাবেলা। সুষমাদের যে-ঘরে বিবাহ-সভা বসবে, যেখানে আসন পড়বে বর-কনের, সেখান থেকে সমস্ত লোকজন সরিয়ে দিয়ে, সুষমা একলা বসে মেঝের উপর একটা পদ্মফুলের আলপনা এঁকেছে। থালায় আছে নানা জাতের ফুল ফল, ধূপ জ্বলছে, ইলেকট্রিক আলো নিবিয়ে প্রদীপ জ্বালানো হয়েছে। ঘরের দ্বারের কাছে সুষমা বসে আছে চুপ করে। মুক্তারামকে ডেকে পাঠিয়েছে। এখনি সে আসবে।

এল মুক্তারাম। সুষমা অনেক্ষণ তার পায়ের উপর মাথা দিয়ে রইল পড়ে। তার পর সেই আলপনা-কাটা জায়গায় আসন পেতে বসালে তাকে। বললে, “ প্রভু দুর্বল আমি, মনের গোপনে যদি পাপ থাকে আজ সমস্ত ধুয়ে দাও। আমার সমস্ত আসক্তি দূর হোক, জয়যুক্ত হোক তোমার বাণী। আজ সন্ধ্যায় এইখানে তোমার প্রসন্ন দৃষ্টির সামনে তোমার চরণস্পর্শে আমার নতুন জীবন