চণ্ডিদাস ও বিদ্যাপতি

কত-না যাতনা দিনু।

বঁধুর পিরীতি আরতি দেখিয়া

মোর মনে হেন করে

কলঙ্কের ডালি মাথায় করিয়া

আনল ভেজাই ঘরে!

রাধা শ্যামকে প্রথম দেখিয়াই বলিয়া উঠিলেন –

এ ঘোর রজনী, মেঘের ঘটা,

কেমনে আইল বাটে?

আঙ্গিনার কোণে তিতিছে বঁধুয়া

দেখিয়া পরাণ ফাটে!

কিন্তু তাহার পরেই যে তৎক্ষণাৎ মুখ ফিরাইয়া সখীদের ডাকিয়া কহিলেন–

সই, কি আর বলিব তোরে,

বহু পুণ্যফলে সে-হেন বঁধুয়া

আসিয়া মিলল মোরে!

ইহার মধ্যে কতটা কথা রাধার মনের উপর দিয়া চলিয়া গিয়াছে! কতটা কথা একেবারে বলাই হয় নাই! প্রথমেই শ্যামকে ভিজিতে দেখিয়া দুঃখ, তাহার পরেই সখীদের ডাকিয়া তাহাদের কাছে সুখের উচ্ছ্বাস, ইহার মধ্যে শৃঙ্খলটি কোথায়? সে শৃঙ্খল পাঠকদিগকে গড়িয়া লইতে হয়। রাধা যা কহিল তাহা তা সামান্য, কিন্তু রাধা যা কহিল না তাহা কতখানি! যাহা বলা হইল না পাঠকদিগকে তাহাই শুনিতে হইবে! শ্যামকে ভিজিতে দেখিয়া রাধার দুঃখ ও শ্যামকে ভিজিতে দেখিয়াই রাধার সুখ, উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব হইতেছে। রাধার হৃদয়ের এই তরঙ্গভঙ্গ, এই উত্থানপতন, কত অল্প কথায় কত সুন্দররূপে ব্যক্ত হইয়াছে! প্রথম দুই ছত্রে শ্যামকে দেখিয়া দুঃখ, দ্বিতীয় দুই ছত্রে সুখ, তৃতীয় দুই ছত্রে আবার দুঃখ, চতুর্থ দুই ছত্রে আবার সুখ। রাধা হাসিবে কি কাঁদিবে ভাবিয়া পাইতেছে না। রাধা সুখে দুঃখে আকুল হইয়া পড়িয়াছে। শেষে রাধা এই মীমাংসা করিল, শ্যাম আমার জন্য কত কষ্ট পাইয়াছে, আমি শ্যামের জন্য ততোধিক কষ্ট স্বীকার করিয়া শ্যামের সে ঋণ পরিশোধ করিব।

দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত। –

সই, কেমনে ধরিব হিয়া?

আমার বঁধুয়া আন বাড়ি যায়

আমার আঙ্গিনা দিয়া!

সে বঁধু কালিয়া না চায় ফিরিয়া,

এমতি করিল কে?

আমার অন্তর যেমন করিছে

তেমনি হউক সে!

যাহার লাগিয়া সব তেয়াগিনু,

লোকে অপযশ কয়,