মন্ত্রি-অভিষেক

এ সম্বন্ধে আলোচনা করিতে গেলে একটি প্রশ্নের মীমাংসা আবশ্যক। তোমরা যে অতিরিক্ত আরো গুটিকতক দেশীয় লোক মন্ত্রিসভায় আহ্বান করিতেছ তাহার উদ্দেশ্য কি? আমাদের অভাব, আমাদের আবশ্যক, আমাদের লোকের মুখে আরো ভাল করিয়া জানিতে চাও। ইহা ছাড়া দেশীয় মন্ত্রিবৃদ্ধির আর কোন যুক্তিসঙগত কারণ থাকিতে পারে না। যদি বাস্তবিক সেই উদ্দেশ্যই থাকে তবে সহজেই বুঝিতে পারিবে তোমাদের নির্ব্বাচনে তাহা সম্পূর্ণ সাধিত হইবার সম্ভাবনা অল্প, এবং আমাদের নির্ব্বাচনেই সেই উদ্দেশ্য বাস্তবিক সফল হইবে। আগে একটা উদ্দেশ্য পরিষ্কাররূপে স্থির কর, তার পরে সে উদ্দেশ্য কিসে সিদ্ধ হইবে বিবেচনা করিয়া দেখো।

যদি বল “উদ্দেশ্য বিশেষ কিছুই নাই, আমরা দেশীয় মন্ত্রীর কোন আবশ্যক বোধ করিতেছি না, কেবল, তোমরা কিছুদিন হইতে বড় বিরক্ত করিতেছ, তাই অল্পসল্প খোরাক দিয়া তোমাদের মুখ বন্ধ করাই আমাদের উদ্দেশ্য”, তবে সে উদ্দেশ্য সফল হয় নাই আজই তাহার প্রমাণ। আজ আমরা এই শহরের যত বক্তা এবং যত শ্রোতা ইন্‌ফ্লয়েঞ্জা শয্যা হইতে কায়ক্লেশে গাত্রোত্থান করিয়া ভগ্নক্ষীণকন্ঠে আপত্তি উত্থাপন করিতে আসিয়াছি, শরীর যতই সুস্থ ও কন্ঠস্বর যতই সবল হইতে থাকিবে আমাদের আপত্তি ততই অধিকতর তেজ ও বায়ুবল লাভ করিতে থাকিবে সন্দেহ নাই।

আমাদের ভূতপূর্ব্ব রাজপ্রতিনিধিগণের মধ্যে অনেকেই একবাক্যে স্বীকার করিয়াছেন যে, ভারতরাজ্যতন্ত্রে প্রজাসাধারণের দ্বারা মন্ত্রীনির্বাচন কোন না কোন উপায়ে প্রবর্ত্তিত করা যুক্তিসঙ্গত। এ সম্বন্ধে লর্ড্‌ নর্থ ব্রুক, লর্ড্‌ রিপন, লর্ড্‌ ডফারিন, স্যর্‌ রিচার্ড্‌ টেম্প্‌ল প্রভৃতির কথা কতদূর শ্রদ্ধার যোগ্য তাহা বলা বাহুল্য। তাঁহাদের উপরে আমাদের আর নূতন যুক্তি দেখাইবার আবশ্যক করে না।

আমরা কেবল এই বলিয়া আক্ষেপ করিব যে, যুক্তি আমাদের পক্ষে, অভিজ্ঞতা আমাদের পক্ষে, সহৃদয়তা আমাদের পক্ষে, বড় বড় সুযোগ্য লোকের মত আমাদের পক্ষে, তথাপি কেন আমাদের ইচ্ছা পূর্ণ হয় না। আমাদের এই দুর্দশা দেখিয়াই আমরা আরো অধিকতর আগ্রহের সহিত প্রার্থনা করিব যে, যে রাজকীয় রহস্যধামে আমাদের ভাগ্য স্থির হয় সেখানে আমাদের আপনার লোক যেন পাঠাইতে পারি—তাহা হইলে যদি কোন প্রার্থনায় নিষ্ফলকাম হই, তবে আর কিছু না হৌক তাহার একটা যুক্তিসঙ্গত উত্তর শুনিবার স্বল্প সুখ হইতে বঞ্চিত হইব না।

এইখানেই আমি ক্ষান্ত হইতে চাহি। আলোচ্য প্রস্তাব সম্বন্ধে অনেক প্রমাণ, অনেক তর্ক এবং অনেক ইতিহাস আছে। আমি একান্ত সসঙ্কোচে তাহার প্রতি হস্তক্ষেপ করি নাই। অভ্যাস অনুরাগ ও চর্চ্চা অনুসারে রাজনীতি আমার অধিকার বহির্ভূত। কেবল মনে মনে ঈষৎ ভরসা আছে যে, রাজনৈতিক প্রসঙ্গও সম্ভবতঃ যুক্তিশাস্ত্রের বিধানের মধ্যে ধরা দেয়, অর্থাৎ সত্যের নিয়ম হয়ত এখানেও খাটে, এই জন্য সহজ বুদ্ধির উপর নির্ভর করিয়া লর্ড্‌ ক্রসের রচিত বিধির বিরুদ্ধে আমার আপত্তি ব্যক্ত করিয়াছি। অনভিজ্ঞতাবশতঃ যদি কোন ত্রুটি বা অসর্ম্পূণতা প্রকাশ পায়, তবে আমার পরবর্ত্তী যোগ্যতর বক্তা মহাশয়েরা অনুগ্রহপূর্ব্বক তাহা সংশোধন ও সম্পূরণ করিয়া লইবেন। যদি কোন অন্যায় অবিবেচনার কথা বলিয়া থাকি, তবে তাহার পাপের ভার শ্রোতৃবর্গ অনুগ্রহপূর্ব্বক বক্তার নিজের শিরে চাপাইবেন, কোন সম্প্রদায় বা সভার স্কন্ধে আরোপ করিবেন না।