ধর্ম
জটাজালের মধ্যে প্রচ্ছন্ন চিরস্রোত অমৃতনিস্যন্দিনী পুণ্যভাগীরথীর আনন্দ-কল্লোল কি শুনা যাইতেছে না? নিজের ডমরুধ্বনিতে, নিজের অস্ফুট হর্ষগানে উন্মত্ত হইয়া নিজে যে অবিশ্রাম নৃত্য করিতেছেন, তাহার গভীর কারণ কি দেখিতে পাইতেছি? বাহিরের লোকে তাঁহাকে দরিদ্র বলিয়া মনে করে বটে, কিন্তু তাঁহার গৃহের মধ্যে দেখো দেখি, অন্নপূর্ণা চিরদিন অধিষ্ঠান করিতেছেন। আর ঐ যে মলিনতা দেখিতেছ, শ্মশানের ভস্ম দেখিতেছ, মৃত্যুর চিহ্ন দেখিতেছ, ও কেবল উপরে—ঐ শ্মশানভস্মের মধ্যে আচ্ছন্ন রজতগিরিনিভ চারুচন্দ্রাবতংস অতি সুন্দর অমর বপু দেখিতেছ না কি? উনি যে মৃত্যুঞ্জয়। আর, মৃত্যুকে কি আমরা চিনি? আমরা মৃত্যুকে করালদশনা লোলরসনা মূর্তিতে দেখিতেছি, কিন্তু ঐ মৃত্যুই ইঁহার প্রিয়তমা, ঐ মৃত্যুকে বক্ষে ধরিয়া ইনি আনন্দে বিহ্বল হইয়া আছেন। কালীর যথার্থ স্বরূপ আমাদের জানিবার কোন সম্ভাবনা নাই, আমাদের চক্ষে তিনি মৃত্যু-আকারে প্রতিভাত হইতেছেন, কিন্তু ভক্তেরা জানেন কালীও যা গৌরীও তাই। আমরা তাঁহার করালমূর্তি দেখিতেছি, কিন্তু তাঁহার মোহিনীমূর্তি কেহ কেহ বা দেখিয়া থাকিবেন। শিবকে সকলে যোগী বলে। ইনি কাহার যোগে নিমগ্ন রহিয়াছেন?

    যোগী হে, কে তুমি হৃদি-আসনে,

বিভূতিভূষিত শুভ্রদেহ, নাচিছ দিক্‌-বসনে!

    মহা আনন্দে পুলককায়,

    গঙ্গা উথলি উছলি যায়,

   ভালে শিশু শশী হাসিয়া চায়,

    জটাজূট ছায় গগনে।