পত্রপুট

মাস যায়।

          নির্মম শীতের হাওয়া এসে পৌঁছল হিমাচল থেকে,

     সবুজের গায়ে গায়ে এঁকে দিল হল্‌দের ইশারা,

     পৃথিবীর দেওয়া রঙ বদল হল আলোর দেওয়া রঙে।

     উড়ে এল হাঁসের পাঁতি নদীর চরে,

          কাশের গুচ্ছ ঝরে পড়ল তটের পথে পথে।

 

মাস যায়।

         বিকালবেলার রৌদ্রকে যেমন উজাড় করে দিনান্ত

                      শেষ-গোধূলির ধূসরতায়

                 তেমনি সোনার ফসল চলে গেল

                                অন্ধকারের অবরোধে।

        তার পরে শূন্যমাঠে অতীতের চিহ্নগুলো

               কিছুদিন রইল মৃত শিকড় আঁকড়ে ধরে —

        শেষে কালো হয়ে ছাই হল আগুনের লেহনে।

 

মাস গেল।

     তার পরে মাঠের পথ দিয়ে

                   গোরু নিয়ে চলে রাখাল —

     কোনো ব্যথা নেই তাতে, কোনো ক্ষতি নেই কারো।

     প্রান্তরে আপন ছায়ায় মগ্ন একলা অশথ গাছ,

                        সূর্য-মন্ত্র-জপ-করা ঋষির মতো।

     তারই তলায় দুপুরবেলায় ছেলেটা বাজায় বাঁশি

                           আদিকালের গ্রামের সুরে।

             সেই সুরে তাম্রবরন তপ্ত আকাশে

                              বাতাস হূহু করে ওঠে,

     সে যে বিদায়ের নিত্যভাঁটায় ভেসে-চলা

                   মহাকালের দীর্ঘনিশ্বাস,

      যে কাল, যে পথিক, পিছনের পান্থশালাগুলির দিকে

                       আর ফেরার পথ পায় না

                                এক দিনেরও জন্যে।