বাল্মীকিপ্রতিভা
            অদর্শন হলে তুমি   ত্যেজি লোকালয়ভূমি
            অভাগা বেড়াবে কেঁদে নিবিড় গহনে–
            হেরে মোরে তরুলতা    বিষাদে কবে না কথা
            বিষণ কুসুমকুল বনফুল-বনে।
            ‘হা দেবী’ ‘হা দেবী’ বলি         গুঞ্জরি কাঁদিবে অলি,
            ঝরিবে ফুলের চোখে শিশির-আসার–
            হেরিব জগত শুধু আঁধার! আধার!

সরস্বতী।        দীনহীন বালিকার সাজে,
               আইনু এ ঘোর বনমাঝে,
               গলাতে পাষাণ তোর মন,
                কেন, বৎস, শোন্‌ তাহা, শোন্‌!
           আমি বীণাপাণি, তোরে এসেছি শিখাতে গান।
           তোর গানে গ’লে যাবে সহস্র পাষাণপ্রাণ।
           যে রাগিণী শুনে তোর গ’লেছে কঠোর মন,
           সে রাগিণী তোরি কণ্ঠে বাজিবে রে অনুক্ষণ।
           অধীর হইয়া সিন্ধু কাঁদিবে চরণতলে,
           চারি দিকে দিক্‌বধূ আকুল নয়নজলে।
           মাথার উপরে তোর কাঁদিবে সহস্র তারা,
           অশনি গলিয়া গিয়া হইবে অশ্রুর ধারা।
           যে করুণ রসে আজি ডুবিল রে ও হৃদয়,
           শতস্রোতে তুই তাহা ঢালিবি জগতময়।
           যেথায় হিমাদ্রি আছে সেথা তোর নাম র’বে,
           যেথায় জাহ্নবী বহে তোর কাব্যস্রোত ব’রে!
           সে জাহ্নবী বহিবেক অযুত হৃদয় দিয়া,
           শ্মশান পবিত্র করি মরুভূমি উর্ব্বরিয়া।
           শুনিতে শুনিতে, বৎস, তোর সে অমর গীত’
           জগতের শেষ দিনে রবি হবে অস্তমিত’।
           যত দিন আছে শশী, যত দিন আছে রবি,
           তুই বাজাইবি বীণা তুই আদি মহাকবি!
           মোর পদ্মাসনতলে রহিবে আসন তোর,
           নিত্য নব নব গীতে সতত রহিবি ভোর।