তপতী

বিক্রম। চুপ কর্! দেবদত্ত, কে এদের এমন করে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এরা বলপূর্বক আমার কাছ থেকে বিচার কেড়ে নিতে চায়? দ্বারী কোথায়।

দ্বারীর প্রবেশ

দ্বারী। কী মহারাজ।

বিক্রম। একে প্রহরীশালায় নিয়ে রাখো। কাল বিচার হবে।

দ্বারী। যে আদেশ।

রত্নেশ্বর। মহারানী, আমার আজকের দিন গেল, কালকের দিনকে বিশ্বাস নেই। বাঁচি আর মরি আমার যা-হয় হোক, কিন্তু প্রজার অভিযোগ তোমার পায়ে রেখে গেলুম, তোমাকে সে তুলে নিতে হবে। আমি বিদায় নিলুম।

সুমিত্রা। মনে রইল রত্নেশ্বর।

[ দ্বারী ও রত্নেশ্বরের প্রস্থান

নরেশ। মহারাজ, মন্ত্রী আমাকে দিয়ে কিছু সংবাদ পাঠিয়েছেন— আশু মন্ত্রণার আবশ্যক।

বিক্রম। তোমরা একটার পর আরেকটা উৎপাত নিজে সাজিয়ে আনছ।

নরেশ। উৎপাত সৃষ্টি করতে পারি এত শক্তি আমাদের আছে?

বিক্রম। সৃষ্টি করবার দরকার নেই। সত্যযুগেও রাজ্যে উৎপাতের অভাব ছিল না। কিন্তু উৎপাত ছড়িয়ে থাকে দেশে ও কালে। তোমরা তাদের আজই একদিনের মধ্যে পুঞ্জিত করে সাজিয়েছ। যে-সমস্ত প্রমাণ তোমাদের মিত্রদের বেলায় থাকে বিক্ষিপ্ত, তোমাদের শত্রুদের বেলা আজ তোমরা সেইগুলোকে সংহত করে কালো করে আমার সামনে ধরতে চাও— আজ উৎসবদিনের আলোর উপরে এই কালীমূর্তিকে দাঁড় করিয়ে কেবল এই কথাটা বলতে চাও, যে, তোমাদেরই জিত হল। তোমাদের এই সাজিয়ে-তোলা বিভীষিকার কাছে আমি হার মানব না এ কথা নিশ্চয় জেনো। উৎপাতের সংবাদ আছে, থাক্‌-না, নিশ্চয়ই সে আগামী কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে।

নরেশ। অপেক্ষা করতে নিশ্চয় পারে, মহারাজ, কিন্তু আজ যা সংবাদ আছে কাল তা সংকট হয়ে দাঁড়ায়। তবে যাই, মন্ত্রীকে জানাই গে।

বিক্রম। ওরা আমার প্রিয়পাত্র, ওদের প্রতি আমার পক্ষপাত, ওদের বিচার আমি করতে পারি নে, ওদের শাস্তি দিতে আমি অক্ষম— তোমাদের এ-সব কথা মিথ্যা, মিথ্যা। দণ্ডের যারা যোগ্য তাদের যখন দণ্ড দেব তখন ভয়ে স্তব্ধ হয়ে যাবে। ক্ষীণ দুর্বল তোমরাই, কর্তব্যের তোমরা কী জান! ক্ষমায় দয়ায় অশ্রুজলে তোমাদের কর্তব্যবুদ্ধি পঙ্কিল — তোমরা বিচার করবার স্পর্ধা কর! সময় আসবে, বিচার করব, কিন্তু তোমাদের ঐ কান্না শুনে নয়। মহারানী, তুমি কোথায় চলেছ। যেয়ো না, থামো।

সুমিত্রা। এমন আদেশ কোরো না। চলো রাজকুমার, ঐ লতাবিতানে, মন্ত্রী কী সংবাদ পাঠিয়েছেন শুনতে চাই।

বিক্রম। মহারানী, তোমার এই প্রচ্ছন্ন অবজ্ঞা আমার কর্তব্যকে আরো অসাধ্য করে তুলছে। শুনে যাও — আমি আদেশ করছি। ফিরে এসো।

সুমিত্রা। কী, বলো।

বিক্রম। তুমি আমাকে চিনতে পারলে না— তোমায় হৃদয় নেই, নারী! শংকরের তাণ্ডবকে উপেক্ষা করতে পার কি। সে তো অপ্সরার নৃত্য নয়। আমার প্রেম, এ প্রকাণ্ড, এ প্রচণ্ড, এতে আছে আমার শৌর্য — আমার রাজপ্রতাপের চেয়ে এ ছোটো নয়।