সেঁজুতি

নিত্য তাহা রয়েছে সঞ্চিত। যেথা তব কর্মশালা

সেথা বাতায়ন হতে কে জানি পরায়ে দিত মালা

আমার ললাট ঘেরি সহসা ক্ষণিক অবকাশে,

সে নহে ভৃত্যের পুরস্কার ; কী ইঙ্গিতে কী আভাসে

মুহূর্তে জানায়ে চলে যেত অসীমের আত্মীয়তা

অধরা অদেখা দূত, বলে যেত ভাষাতীত কথা

অপ্রয়োজনের মানুষেরে।

 

                              সে মানুষ, হে ধরণী,

তোমার আশ্রয় ছেড়ে যাবে যবে, নিয়ো তুমি গণি

যা-কিছু দিয়েছ তারে, তোমার কর্মীর যত সাজ,

তোমার পথের যে পাথেয়, তাহে সে পাবে না লাজ ;

রিক্ততায় দৈন্য নহে। তবু জেনো অবজ্ঞা করি নি

তোমার মাটির দান, আমি সে মাটির কাছে ঋণী —

জানায়েছি বারংবার, তাহারি বেড়ার প্রান্ত হতে

অমূর্তের পেয়েছি সন্ধান। যবে আলোতে আলোতে

লীন হত জড়যবনিকা, পুষ্পে পুষ্পে তৃণে তৃণে

রূপে রসে সেই ক্ষণে যে গূঢ় রহস্য দিনে দিনে

হত নিঃশ্বসিত, আজি মর্তের অপর তীরে বুঝি

চলিতে ফিরানু মুখ তাহারি চরম অর্থ খুঁজি।

 

যবে শান্ত নিরাসক্ত গিয়েছি তোমার নিমন্ত্রণে

তোমার অমরাবতী সুপ্রসন্ন সেই শুভক্ষণে

মুক্তদ্বার ; বুভুক্ষুর লালসারে করে সে বঞ্চিত ;

তাহার মাটির পাত্রে যে অমৃত রয়েছে সঞ্চিত

নহে তাহা দীন ভিক্ষু লালায়িত লোলুপের লাগি।

ইন্দ্রের ঐশ্বর্য নিয়ে হে ধরিত্রী, আছ তুমি জাগি

ত্যাগীরে প্রত্যাশা করি, নির্লোভেরে সঁপিতে সম্মান,

দুর্গমের পথিকেরে আতিথ্য করিতে তব দান

বৈরাগ্যের শুভ্র সিংহাসনে। ক্ষুব্ধযারা, লুব্ধ যারা,

মাংসগন্ধে মুগ্ধ যারা, একান্ত আত্মার দৃষ্টিহারা

শ্মশানের প্রান্তচর, আবর্জনাকুণ্ড তব ঘেরি