পুনশ্চ

           দেখলে বাহিরের প্রাচীর ধূলিসাৎ।

        দেবতার বেদীর উপরের ছাদ পড়েছে ভেঙে।

পণ্ডিত বললে, সংস্কার করা চাই আগামী পূর্ণিমার পূর্বেই,

               নইলে দেবতা পরিহার করবেন তাঁর মূর্তিকে।

রাজা বললেন, ‘সংস্কার করো। '

        মন্ত্রী বললেন, ‘ওই কিরাতরা ছাড়া কে করবে পাথরের কাজ।

ওদের দৃষ্টিকলুষ থেকে দেবতাকে রক্ষা করব কী উপায়ে,

        কী হবে মন্দিরসংস্কারে যদি মলিন হয় দেবতার অঙ্গমহিমা। '

           কিরাতদলপতি মাধবকে রাজা আনলেন ডেকে।

        বৃদ্ধ মাধব, শুক্লকেশের উপর নির্মল সাদা চাদর জড়ানো —

পরিধানে পীতধড়া, তাম্রবর্ণ দেহ কটি পর্যন্ত অনাবৃত,

                   দুই চক্ষু সকরুণ নম্রতায় পূর্ণ।

        সাবধানে রাজার পায়ের কাছে রাখলে একমুঠো কুন্দফুল,

                   প্রণাম করলে স্পর্শ বাঁচিয়ে।

রাজা বললেন, ‘তোমরা না হলে দেবালয়-সংস্কার হয় না। '

           ‘ আমাদের ‘পরে দেবতার ওই কৃপা'

    এই ব'লে দেবতার উদ্দেশে মাধব প্রণাম জানালে।

           নৃপতি নৃসিংহরায় বললেন, ‘চোখ বেঁধে কাজ করা চাই,

    দেবমূর্তির উপর দৃষ্টি না পড়ে। পারবে?'

মাধব বললে, ‘অন্তরের দৃষ্টি দিয়ে কাজ করিয়ে নেবেন অন্তর্যামী।

        যতক্ষণ কাজ চলবে, চোখ খুলব না। '

 

    বাহিরে কাজ করে কিরাতের দল,

        মন্দিরের ভিতরে কাজ করে মাধব,

           তার দুই চক্ষু পাকে পাকে কালো কাপড়ে বাঁধা।

দিনরাত সে মন্দিরের বাহিরে যায় না —

        ধ্যান করে, গান গায়, আর তার আঙুল চলতে থাকে।

মন্ত্রী এসে বলে, ‘ত্বরা করো, ত্বরা করো —

         তিথির পরে তিথি যায়, কবে লগ্ন হবে উত্তীর্ণ।’

মাধব জোড়হাতে বলে, যাঁর কাজ তাঁরই নিজের আছে ত্বরা,

              আমি তো উপলক্ষ।’