পুনশ্চ

তামার পাত্র, রুপোর অলংকার, দেবমূর্তির পট, রেশমের কাপড়;

ছেলেদের খেলার জন্যে কাঠের ডমরু, মাটির পুতুল, পাতার বাঁশি;

অর্ঘ্যের উপকরণ, ফল মালা ধূপ বাতি, ঘড়া ঘড়া তীর্থবারি।

    বাজিকর তারস্বরে প্রলাপবাক্যে দেখাচ্ছে বাজি,

                       কথক পড়ছে রামায়ণকথা।

    উজ্জ্বলবেশে সশস্ত্র প্রহরী ঘুরে বেড়ায় ঘোড়ায় চড়ে;

        রাজ-অমাত্য হাতির উপর হাওদায়,

                       সম্মুখে বেজে চলেছে শিঙা।

    কিংখাবে ঢাকা পাল্কিতে ধনীঘরের গৃহিণী,

                   আগে পিছে কিংকরের দল।

           সন্ন্যাসীর ভিড় পঞ্চবটের তলায় —

                       নগ্ন, জটাধারী, ছাইমাখা;

               মেয়েরা পায়ের কাছে ভোগ রেখে যায় —

                       ফল, দুধ, মিষ্টান্ন, ঘি, আতপতণ্ডুল।

 

  থেকে থেকে আকাশে উঠছে চীৎকারধ্বনি

                        ‘জয় ত্রিলোকেশ্বরের জয়'।

        কাল আসবে শুভলগ্নে রাজার প্রথম পূজা,

স্বয়ং আসবেন মহারাজা রাজহস্তীতে চড়ে।

                   তাঁর আগমন-পথের দুই ধারে

           সারি সারি কলার গাছে ফুলের মালা,

                   মঙ্গলঘটে আম্রপল্লব।

        আর ক্ষণে ক্ষণে পথের ধুলায় সেচন করছে গন্ধবারি।

               শুক্লত্রয়োদশীর রাত।

        মন্দিরে প্রথম প্রহরের শঙ্খ ঘণ্টা ভেরী পটহ থেমেছে।

    আজ চাঁদের উপরে একটা ঘোলা আবরণ,

               জ্যোৎস্না আজ ঝাপসা —

                   যেন মূর্ছার ঘোর লাগল।

         বাতাস রুদ্ধ —

               ধোঁয়া জমে আছে আকাশে,

           গাছপালাগুলো যেন শঙ্কায় আড়ষ্ট।