পূরবী
 এ প্রাণ তোমারি এক ছিন্ন তান, সুরের তরণী;
              আয়ুস্রোতমুখে
হাসিয়া ভাসায়ে দিলে লীলাচ্ছলে, কৌতুকে ধরণী
              বেঁধে নিল বুকে।
আশ্বিনের রৌদ্রে সেই বন্দী প্রাণ হয় বিস্ফুরিত
উৎকণ্ঠার বেগে, যেন শেফালির শিশিরচ্ছুরিত
              উৎসুক আলোক।
তরঙ্গহিল্লোলে নাচে রশ্মি তব, বিস্ময়ে পূরিত
              করে মুগ্ধ চোখ।

 

তেজের ভাণ্ডার হতে কী আমাতে দিয়েছ যে ভরে
              কেই বা সে জানে।
কী জাল হতেছে বোনা স্বপ্নে স্বপ্নে নানা বর্ণডোরে
              মোর গুপ্ত-প্রাণে।
তোমার দূতীরা আঁকে ভুবন-অঙ্গনে আলিম্পনা;
মুহূর্তে সে ইন্দ্রজাল অপরূপ রূপের কল্পনা
              মুছে যায় সরে।
তেমনি সহজ হোক হাসিকান্না ভাবনাবেদনা—
              না বাঁধুক মোরে।

 

তারা সবে মিলে থাক্‌ অরণ্যের স্পন্দিত পল্লবে,
              শ্রাবণবর্ষণে;
যোগ দিক নির্ঝরের মঞ্জীর গুঞ্জনকলরবে
              উপলঘর্ষণে।
ঝঞ্ঝার মদিরামত্ত বৈশাখের তাণ্ডবলীলায়
বৈরাগী বসন্ত যবে আপনার বৈভব বিলায়,
              সঙ্গে যেন থাকে।
তার পরে যেন তারা সর্বহারা দিগন্তে মিলায়,
              চিহ্ন নাহি রাখে।

 

হে রবি, প্রাঙ্গণে তব শরতের সোনার বাঁশিতে
              জাগিল মূর্ছনা।