মুক্তকুন্তলা

অভিনয়ের জোগাড়যন্ত্র মোটামুটি একরকম হয়ে এসেছিল। হরীশচন্দ্র কোথা থেকে এনেছিলেন নানা রকমের পরচুলো গোঁফদাড়ি। বউদিদির হাতে পায়ে ধরে দুটো-একটা শাড়িও জোগাড় করেছিলুম। তাঁর কৌটা থেকে সিঁদুর নিয়ে সিঁথেয় পরবার সময় কোনো ভাবনা মনে আসে নি। স্কুলে যাবার সময় ভুলেছিলুম তার দাগ মুছতে। ছেলেদের মধ্যে মস্ত হাসি উঠেছিল। কিছুদিন আমার ক্লাসে মুখ দেখাবার জো রইল না। নাটকের অভিনয়ে সবচেয়ে ফল দেখা গেল এই হাসিতে। আর, বাকিটুকু হয়ে গেল একেবারে ফাঁকি। যেখানে আমাদের স্টেজের বাখারি পোঁতা হয়েছিল ঠিক সেই জায়গায় সেজদাদা কুস্তির আখড়া পত্তন করলেন। মুক্তকুন্তলার সবচেয়ে দুঃখের দশা হল যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, এই কুস্তির আড্ডায়। রণদুর্ধর্ষকে মিহি গলায় বলবার সুযোগ পেলেন না, হে বীরবর, স্বর্গে তোমার সঙ্গে হয়তো দেখা হবে। তার বদলে বলতে হল, সাড়ে নটা বাজল, স্কুলের গাড়ি তৈরি।এর থেকেই বুঝবে, আমরা যখন ছেলেমানুষ ছিলেম সে ছিলেম খাঁটি ছেলেমানুষ।

                *
            *     *
‘দাদা হব’ ছিল বিষম শখ—
তখন বয়স বারো হবে,
       কড়া হয় নি ত্বক।
স্টেজ বেঁধেছি ঘরের কোণে,
বুক ফুলিয়ে ক্ষণে ক্ষণে
       হয়েছিল দাদার অভিনয়;
কাঠের তরবারি মেরে
দাড়ি-পরা বিপক্ষেরে
       বারে বারেই করেছিলুম জয়।
আজ খসেছে মুখোশটা সে,
আরেক লড়াই চারি পাশে—
       মারছি কিছু অনেক খাচ্ছি মার।
দিন চলেছে অবিরত,
ভাবনা মনে জমছে কত,
       ষোলো-আনা নয় সে অহংকার।
দেখছে নতুন পালার দাদা
হাত দুটো তার পড়ছে বাঁধা
       এ সংসারের হাজার গোলামিতে।
তবুও সব হয় নি ফাঁকি,
তহবিলে রয় যা বাকি
       কাজ চলছে দিতে এবং নিতে।
সাঙ্গ হয়ে এল পালা,