সোনার তরী

       সবে যেন বসে গেছে নিরাকার ভোজে।

       মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়া উৎকট

       হঠাৎ ফুকারি উঠে — ‘ হিং টিং ছট্‌। '

       স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান,

       গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান।

 

       চারি দিক হতে এল পণ্ডিতের দল —

       অযোধ্যা কনোজ কাঞ্চী মগধ কোশল।

       উজ্জয়িনী হতে এল বুধ-অবতংস

       কালিদাস-কবীন্দ্রের ভাগিনেয়বংশ।

       মোটা মোটা পুঁথি লয়ে উলটায় পাতা,

       ঘন ঘন নাড়ে বসি টিকিসুদ্ধ মাথা।

        বড়ো বড়ো মস্তকের পাকা শস্যখেত

       বাতাসে দুলিছে যেন শীর্ষ-সমেত।

       কেহ শ্রুতি, কেহ স্মৃতি, কেহবা পুরাণ,

       কেহ ব্যাকরণ দেখে, কেহ অভিধান।

       কোনোখানে নাহি পায় অর্থ কোনোরূপ,

       বেড়ে ওঠে অনুস্বর-বিসর্গের স্তূপ।

       চুপ করে বসে থাকে বিষম সংকট,

       থেকে থেকে হেঁকে ওঠে — ‘ হিং টিং ছট্‌। '

         স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান,

       গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান।

 

       কহিলেন হতাশ্বাস হবুচন্দ্ররাজ,

      ‘ ম্লেচ্ছদেশে আছে নাকি পণ্ডিত-সমাজ,

       তাহাদের ডেকে আনো যে যেখানে আছে —

       অর্থ যদি ধরা পড়ে তাহাদের কাছে। '

       কটাচুল নীলচক্ষু কপিশকপোল,

       যবন পণ্ডিত আসে, বাজে ঢাক ঢোল।

       গায়ে কালো মোটা মোটা ছাঁটাছোঁটা কুর্তি,

       গ্রীষ্মতাপে উষ্মা বাড়ে, ভারি উগ্রমূর্তি।

       ভূমিকা না করি কিছু ঘড়ি খুলি কয় —