প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
কাছে ছিল যত ব্রাহ্মণদল করিল কপট কোপ,
‘ ভণ্ডতাপস, ধর্মের নামে করিছ ধর্মলোপ!
তুমি সুখে ব ' সে ধুলা ছড়াইছ সরল লোকের চোখে,
অবলা অখলা পথে পথে আহা ফিরিছে অন্নশোকে! '
কহিল কবীর, ‘ অপরাধী আমি, ঘরে এসো নারী তবে —
আমার অন্ন রহিতে কেন বা তুমি উপবাসী রবে? '
দুষ্টা নারীরে আনি গৃহমাঝে বিনয়ে আদর করি
কবীর কহিল, ‘ দীনের ভবনে তোমারে পাঠালো হরি।'
কাঁদিয়া তখন কহিল রমণী লাজে ভয়ে পরিতাপে,
‘ লোভে পড়ে আমি করিয়াছি পাপ, মরিব সাধুর শাপে।'
কহিল কবীর, ‘ ভয় নাই মাতঃ, লইব না অপরাধ —
এনেছ আমার মাথার ভূষণ অপমান অপবাদ।'
ঘুচাইল তার মনের বিকার, করিল চেতনা দান —
সঁপি দিল তার মধুর কণ্ঠে হরিনামগুণগান।
রটি গেল দেশে — কপট কবীর, সাধুতা তাহার মিছে।
শুনিয়া কবীর কহে নতশির, ‘ আমি সকলের নীচে।
যদি কূল পাই তরণী - গরব রাখিতে না চাহি কিছু —
তুমি যদি থাক আমার উপরে আমি রব সব - নিচু।’
রাজার চিত্তে কৌতুক হল শুনিতে সাধুর গাথা।
দূত আসি তারে ডাকিল যখন সাধু নাড়িলেন মাথা।
কহিলেন, ‘ থাকি সবা হতে দূরে আপন হীনতা - মাঝে ;
আমার মতন অভাজন জন রাজার সভায় সাজে!’
দূত কহে, ‘ তুমি না গেলে ঘটিবে আমাদের পরমাদ,
যশ শুনে তব হয়েছে রাজার সাধু দেখিবার সাধ।’
রাজা বসে ছিল সভার মাঝারে, পারিষদ সারি সারি —
কবীর আসিয়া পশিল সেথায় পশ্চাতে লয়ে নারী।
কেহ হাসে কেহ করে ভুরুকুটি, কেহ রহে নতশিরে,
রাজা ভাবে — এটা কেমন নিলাজ রমণী লইয়া ফিরে!