চিত্রা

নির্জন পথ চিত্রিতবৎ, সাড়া নাই সারা দেশে —

রাজার দুয়ারে দুইটি প্রহরী ঢুলিছে নিদ্রাবেশে।

শুধু থেকে থেকে ডাকিছে কুকুর সুদূর পথের মাঝে —

গম্ভীর স্বরে প্রাসাদশিখরে প্রহরঘন্টা বাজে।

 

 

অফুরান পথ, অফুরান রাতি, অজানা নূতন ঠাঁই —

অপরূপ এক স্বপ্নসমান, অর্থ কিছুই নাই।

কী যে দেখেছিনু মনে নাহি পড়ে, ছিল নাকো আগাগোড়া —

লক্ষ্যবিহীন তীরের মতন ছুটিয়া চলেছে ঘোড়া।

চরণে তাদের শব্দ বাজে না, উড়ে নাকো ধূলিরেখা —

কঠিন ভূতল নাই যেন কোথা, সকলি বাষ্পে লেখা।

মাঝে মাঝে যেন চেনা-চেনা-মতো মনে হয় থেকে থেকে —

নিমেষ ফেলিতে দেখিতে না পাই কোথা পথ যায় বেঁকে।

মনে হল মেঘ, মনে হল পাখি, মনে হল কিশলয়,

ভালো করে যেই দেখিবারে যাই মনে হল কিছু নয়।

দুই ধারে এ কি প্রাসাদের সারি? অথবা তরুর মূল?

অথবা এ শুধু আকাশ জুড়িয়া আমারই মনের ভুল?

মাঝে মাঝে চেয়ে দেখি রমণীর অবগুণ্ঠিত মুখে —

নীরব নিদয় বসিয়া রয়েছে, প্রাণ কেঁপে ওঠে বুকে।

ভয়ে ভুলে যাই দেবতার নাম, মুখে কথা নাহি ফুটে ;

হুহু রবে বায়ু বাজে দুই কানে ঘোড়া চলে যায় ছুটে।

 

 

চন্দ্র যখন অস্তে নামিল তখনো রয়েছে রাতি,

পূর্ব দিকের অলস নয়নে মেলিছে রক্ত ভাতি।

জনহীন এক সিন্ধুপুলিনে অশ্ব থামিল আসি —

সমুখে দাঁড়ায়ে কৃষ্ণ শৈল গুহামুখ পরকাশি।

সাগরে না শুনি জলকলরব, না গাহে উষার পাখি,

বহিল না মৃদু প্রভাতপবন বনের গন্ধ মাখি।

অশ্ব হইতে নামিল রমণী, আমিও নামিনু নীচে,