পলাতকা

               কী অর্থে যে ভরা।

          শুনি নাই তো মানুষের কী বাণী

     মহাকালের বীণায় বাজে। আমি কেবল জানি,

     রাঁধার পরে খাওয়া, আবার খাওয়ার পরে রাঁধা,

           বাইশ বছর এক-চাকাতেই বাঁধা।

     মনে হচ্ছে সেই চাকাটা — ঐ যে থামল যেন ;

          থামুক তবে। আবার ওষুধ কেন।

 

 

     বসন্তকাল বাইশ বছর এসেছিল বনের আঙিনায়।

               গন্ধে বিভোল দক্ষিণ বায়

          দিয়েছিল জলস্থলের মর্ম-দোলায় দোল ;

          হেঁকেছিল, “ খোল্‌ রে দুয়ার খোল্‌। ”

সে যে কখন আসত যেত জানতে পেতেম না যে।

                   হয়তো মনের মাঝে

          সংগোপনে দিত নাড়া ; হয়তো ঘরের কাজে

          আচম্বিতে ভুল ঘটাত ; হয়তো বাজত বুকে

          জন্মান্তরের ব্যথা ; কারণ-ভোলা দুঃখে সুখে

হয়তো পরান রইত চেয়ে যেন রে কার পায়ের শব্দ শুনে,

                   বিহ্বল ফাল্গুনে।

          তুমি আসতে আপিস থেকে, যেতে সন্ধ্যাবেলায়

               পাড়ায় কোথা শতরঞ্জ খেলায়।

                   থাক্‌ সে-কথা।

আজকে কেন মনে আসে প্রাণের যত ক্ষণিক ব্যাকুলতা।

 

 

          প্রথম আমার জীবনে এই বাইশ বছর পরে

               বসন্তকাল এসেছে মোর ঘরে।

          জানলা দিয়ে চেয়ে আকাশ পানে

     আনন্দে আজ ক্ষণে ক্ষণে জেগে উঠছে প্রাণে —

               আমি নারী, আমি মহীয়সী,

আমার সুরে সুর বেঁধেছে জ্যোৎস্না-বীণায় নিদ্রাবিহীন শশী।