চণ্ডালিকা
       মা।  তুই অবাক ক’রে দিলি আমায় মেয়ে।
            পুরাণে শুনি না কি তপ করেছেন উমা
                  রোদের জ্বলনে–
                           তোর কি হল তাই॥ স্বরলিপি
    প্রকৃতি।  হাঁ মা, আমি বসেছি তপের আসনে॥ স্বরলিপি
       মা।  তোর সাধনা কাহার জন্যে॥ স্বরলিপি
    প্রকৃতি।  যে আমারে দিয়েছে ডাক, দিয়েছে ডাক,
                  বচনহারা আমাকে দিয়েছে বাক্‌।
                  যে আমারি জেনেছে নাম
            ওগো তারি নামখানি মোর হৃদয়ে থাক্‌।
              আমি তারি বিচ্ছেদদহনে
                  তপ করি চিত্তের গহনে।
              দুঃখের পাবকে হয়ে যাক শুদ্ধ
                  অন্তরে মলিন যাহা আছে রুদ্ধ–
              অপমাননাগিনীর খুলে যায় পাক॥ স্বরলিপি
       মা।      কিসের ডাক তোর কিসের ডাক।
             কোন্‌ পাতালবাসী অপদেবতার ইশারা
                তোকে ভুলিয়ে নিয়ে যাবে–
                      আমি মন্ত্র প’ড়ে কাটাব তার মায়া॥ স্বরলিপি
     প্রকৃতি।  আমার মনের মধ্যে বাজিয়ে দিয়ে গেছে–
                   জল দাও, জাল দাও, জল দাও॥ স্বরলিপি
        মা।  পোড়া কপাল আমার!
               কে বলেছে তোকে ‘জল দাও’!
                 সে কি তোর আপন জাতের কেউ। স্বরলিপি
     প্রকৃতি।  হাঁ গো মা, সেই কথাই তো ব’লে গেলেন তিনি,
                 তিনি আমার আপন জাতের লোক।
             আমি চণ্ডালী– সে যে মিথ্যা, সে যে মিথ্যা,
                    সে যে দারুণ মিথ্যা।
                 শ্রাবণের কালো যে মেঘ
                    তারে যদি নাম দাও ‘চণ্ডাল’
                 তা ব’লে কি জাত ঘুচিবে তার,
                    অশুচি হবে কি তার জল।