চিত্রা

ঘরে-ফেরা শ্রান্ত গাভী গুটি দুই-তিন

কুটির-অঙ্গনে বাঁধা, ছবির মতন

স্তব্ধপ্রায়। গৃহকার্য হল সমাপন —

কে ওই গ্রামের বধূ ধরি বেড়াখানি

সম্মুখে দেখিছে চাহি, ভাবিছে কী জানি

ধূসর সন্ধ্যায়।

 

 

                অমনি নিস্তব্ধপ্রাণে

বসুন্ধরা, দিবসের কর্ম-অবসানে,

দিনান্তের বেড়াটি ধরিয়া আছে চাহি

দিগন্তের পানে। ধীরে যেতেছে প্রবাহি

সম্মুখে আলোকস্রোত অনন্ত অম্বরে

নিঃশব্দ চরণে ; আকাশের দূরান্তরে

একে একে অন্ধকারে হতেছে বাহির

একেকটি দীপ্ত তারা, সুদূর পল্লীর

প্রদীপের মতো। ধীরে যেন উঠে ভেসে

ম্লানচ্ছবি ধরণীর নয়ননিমেষে

কত যুগ-যুগান্তের অতীত আভাস,

কত জীবজীবনের জীর্ণ ইতিহাস।

যেন মনে পড়ে সেই বাল্যনীহারিকা ;

তার পরে প্রজ্বলন্ত যৌবনের শিখা ;

তার পরে স্নিগ্ধশ্যাম অন্নপূর্ণালয়ে

জীবধাত্রী জননীর কাজ বক্ষে লয়ে

লক্ষ কোটি জীব — কত দুঃখ, কত ক্লেশ,

কত যুদ্ধ, কত মৃত্যু, নাহি তার শেষ।

 

 

ক্রমে ঘনতর হয়ে নামে অন্ধকার,

গাঢ়তর নীরবতা — বিশ্বপরিবার

সুপ্ত নিশ্চেতন। নিঃসঙ্গিনী ধরণীর

বিশাল অন্তর হতে উঠে সুগম্ভীর