কাহিনী
পল্লবঘন আম্রকানন    রাখালের খেলাগেহ,
স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল —   নিশীথশীতল স্নেহ।
বুকভরা মধু বঙ্গের বধূ    জল লয়ে যায় ঘরে —
 
মা বলিতে প্রাণ করে আনচান,    চোখে আসে জল ভরে।
দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে    প্রবেশিনু নিজগ্রামে —
কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি    রথতলা করি বামে ,
রাখি হাটখোলা, নন্দীর গোলা, মন্দির করি পাছে
তৃষাতুর শেষে পঁহুছিনু এসে    আমার বাড়ির কাছে ।
 
ধিক্‌ ধিক্‌ ওরে, শতধিক্‌ তোরে,    নিলাজ কুলটা ভূমি!
যখনি যাহার তখনি তাহার,    এই কি জননী তুমি!
সে কি মনে হবে একদিন যবে    ছিলে দরিদ্রমাতা
আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া    ফল ফুল শাক পাতা!
আজ কোন্‌ রীতে কারে ভুলাইতে    ধরেছ বিলাসবেশ —
পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা, পুষ্পে খচিত কেশ!
আমি তোর লাগি ফিরেছি বিবাগি    গৃহহারা সুখহীন —
তুই হেথা বসি ওরে রাক্ষসী,    হাসিয়া কাটাস দিন!
ধনীর আদরে গরব না ধরে!    এতই হয়েছ ভিন্ন
কোনোখানে লেশ নাহি অবশেষ    সেদিনের কোনো চিহ্ন!
কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ি,    ক্ষুধাহরা সুধারাশি!
যত হাসো আজ যত করো সাজ    ছিলে দেবী, হলে দাসী।
 
বিদীর্ণ হিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া    চারি দিকে চেয়ে দেখি —
প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে,    সেই আমগাছ একি!
বসি তার তলে নয়নের জলে    শান্ত হইল ব্যথা,
একে একে মনে উদিল স্মরণে    বালক - কালের কথা ।
সেই মনে পড়ে জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে   রাত্রে নাহিকো ঘুম,
অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি    আম কুড়াবার ধুম ।
সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর,    পাঠশালা - পলায়ন —
ভাবিলাম হায় আর কি কোথায়    ফিরে পাব সে জীবন !
সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস    শাখা দুলাইয়া গাছে,