পরিশিষ্ট
মানুষকে ঠেসে ঢুকিয়ে দিয়েছে, ঘুষ খেয়ে থাকবে কিম্বা আগন্তুক ভারি দরের।

সেকালে অক্ষরগন্‌তি-করা তিনমাত্রামূলক ছন্দে যুক্তধ্বনি বর্জন করে চলতুম। কিন্তু, তাতে রচনায় অতিলালিত্যের দুর্বলতা এসে পৌঁছত। সেটা যখন আমার কাছে বিরক্তিকর হল তখন যুক্তধ্বনির শরণ নিলুম। ছন্দটা একদিন ছিল যেন নবনী দিয়ে গড়া–

বরষার রাতে জলের আঘাতে

পড়িতেছে যূথী ঝরিয়া,

পরিমলে তারি সজল পবন

করুণায় উঠে ভরিয়া।

এই দুর্বলতার মধ্যে যুক্তবর্ণ এসে দেখা দিল–

নববর্ষার বারিসংঘাতে

পড়ে মল্লিকা ঝরিয়া,

সিক্তপবন সুগন্ধে তারি

কারুণ্যে উঠে ভরিয়া।

তিন-তিন মাত্রায় যার গ্রন্থিযোজনা এমন একটি ছন্দের দৃষ্টান্ত দেখাই–

আঁখির পাতায় নিবিড় কাজল

গলিছে নয়নসলিলে।

অক্ষরসংখ্যা সমান রেখে এই দুটো পদে যুক্তবর্ণ যদি চড়াই তাহলে সেটা কেমন হয়– যেমন এক-এক সময়ে দেখা যায়, জোয়ান পুরুষ ক্ষীণ স্ত্রীর ঘাড়ে বোঝা চাপিয়ে পথে চলে নির্মমভাবে। প্রমাণ দিই–

চক্ষুর পল্লবে নিবিড় কজ্জ্বল

গলিছে অশ্রুর নির্ঝরে।

কিন্তু, এই বোঝা পয়ারজাতীয় পালোয়ানের স্কন্ধে চাপালে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকবে না। প্রথমে বিনা-বোঝার চালটা দেখানো যাক–

শ্রাবণের কালো ছায়া নেমে আসে তমালের বনে
যেন দিক্‌-ললনার গলিত কাজল-বরিষনে।

এইটিকে গুরুভার করে দিই–

বর্ষার তমিস্রচ্ছায়া ব্যাপ্ত হল অরণ্যের তলে
যেন অশ্রুসিক্তচক্ষু দিগ্‌বধূর গলিত কজ্জলে।

এতটা ভারবৃদ্ধি যে সম্ভব হয় তার কারণ পয়ার স্থিতিস্থাপক।

ধ্বনির দুইমাত্রা এবং তিনমাত্রা বাংলা ছন্দের আদিম এবং রূঢ়িক উপাদান। তারপরে এই দুই এবং তিনের যোগে যৌগিকমাত্রার ছন্দের উৎপত্তি। তিন + দুই, তিন + চার, তিন + দুই + চার প্রভৃতি নানাপ্রকার যোগ চলেছে আধুনিক বাংলা ছন্দে। তিন +দুই-মাত্রামূলক ছন্দের দৃষ্টান্ত–

আঁধার রাতি জ্বেলেছে বাতি

অযুতকোটি তারা,