ঝি বলে, ঠাক্রুন মোর নাই কোনো দোষ।
এ রকম বিপর্যয়ও চলে। একই ছড়ায় ‘চিম্নি’কে একমাত্রা গ্রেস মার্কা দেওয়া হয়েছে, অথচ ‘ঠাক্রুন’কে খর্ব করে তিনমাত্রায় নামানো গেল। অপরাধ ঘটেছে বলে মনে করি নি।
জল ছিটাইয়া দাও, ধুলা যাক মরে।
অপর পক্ষে–
এক্টা নয় দুটো নয় একশোর বেশি।
প্রয়োজনমতো এটাও চলে, ওটাও চলে। নিখতির মাপে বিচার করতে গেলে বিশুদ্ধ ওজনের পয়ার হচ্ছে–
তাতে প্রত্যেক অক্ষর নিখুঁত একমাত্রা, সবসুদ্ধ চোদ্দটা। ‘রাস্তা’ ‘কুস্তি’ প্রভৃতি শব্দে ওজন বেড়ে যায়, তবুও বহুসহিষ্ণু পয়ারকে কাবু করতে পারে না।
প্রাকৃত-বাংলার ক্রিয়াপদ নিয়ে কথা হচ্ছিল। ক্রিয়াপদেই তার আপন চেহারা। ঐটুকু ছাড়া তাঁর আর কোনো উপসর্গ নেই বললেই চলে। বাংলা-সংস্কৃত ভাষার মতো সে শুচিবায়ুগ্রস্ত নয়। ভোজে বসে গেছে ব্রাহ্মণ, তাকে পরিবেশনকর্তা জিজ্ঞাসা করলে, নিরামিষ না আমিষ। সে বললে, দ্বৌ কর্তব্যৌ। তেমনি শব্দবাছাই নিয়ে যদি প্রাকৃত-বাংলাকে প্রশ্ন করা যায় ‘কী চাই, প্রাকৃত শব্দ না সংস্কৃত শব্দ’ সে বলবে, দ্বৌ কর্তব্যৌ। তার জাতবিচার নেই বললেই হয়। পছন্দ হবামাত্র ইংরেজি পারসি সব শব্দই সে আত্মসাৎ করে। আবার অমরকোষবিহারী বড়ো বড়ো বহরওয়ালা সংস্কৃত শব্দকে ওদেরই ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে নেয়। সংস্কৃত ভাষার প্রতি সম্ভ্রমবশত তার মুখে বাঁধবে না।–
তাই পরেছেন চীনাংশুকের পট্টবসন বাহারে।
নন-কো-অপরেশনের দিনেও ইংরেজি শব্দ চালিয়ে দিতে পিকেটিঙের ভয় নেই। যথা–
প্রাক্টিক্যাল লোকে বলে, এ যে বাড়াবাড়ি।
শিবনেত্র হল বুঝি, এইবার মোলো,
অক্সিজেন নাকে দিয়ে চাঙ্গা করে তোলো।
কিন্তু সংস্কৃত-বাংলায় বাছবিচার খুব কড়া। আধুনিকদের হাতে পড়ে ম্লেচ্ছপনা কিছু-কিছু সয়ে গেছে; কিন্তু সেটুকু বড়োজোর বাইরের রোয়াকে, ভিতরমহলে রীতরক্ষা সম্বন্ধে কষাকষি।
অঙ্গসজ্জাসমাধানে ভূরি মেহন্নৎ।
এটাকে প্রহসন বলে পাঠক হয়তো মাপ করতে পারেন, কিন্তু প্রাকৃত বাংলায় এইরকম ভিন্নপর্যায়ের শব্দগুলো যখন কাছাকাছি বসানো যায় তাদের আওয়াজের মধ্যে অত্যন্ত বেশি বেমিল হয় না। আমার এই গদ্যপ্রবন্ধ পড়ে দেখলে পাঠকেরা সেটা লক্ষ্য করতে