“সেবার ছলে কাছে আসবার সুযোগ যদি পাই ছাড়ব কেন।”
“তার চেয়ে কোনো সুযোগে তোমার বাগানের কাজে যদি যাও তো ঢের বেশি খুশি হব। আমি পড়ে আছি, আর দিনে দিনে বাগান যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
“হোক-না নষ্ট। সেরে ওঠো আগে, তার পরে সেদিনকার মতো দুজনে মিলে কাজ করব।”
“সরলা চলে গেছে, তুমি একলা পড়েছ, কাজে মন যাচ্ছে না। কিন্তু উপায় কি? তাই বলে লোকসান করতে দিয়ে না।”
“লোকসানের কথা আমি ভাবছি নে নীরু। বাগান করাটা যে আমার ব্যাবসা সে কথা এতদিন তুমিই ভুলিয়ে রেখেছিলে, কাজে তাই সুখ ছিল। এখন মন যায় না।”
“অমন করে আক্ষেপ করছ কেন। বেশ তো কাজ করছিলে এই সেদিন পর্যন্ত। কিছুদিনের জন্যে যদি বাধা পড়ে তাই নিয়ে এত ব্যাকুল হোয়ো না।”
“পাখাটা কি চালিয়ে দেব।”
“বাড়াবাড়ি কোরো না তুমি, এ-সব কাজ তোমাদের নয়। এতে আমাকে আরো ব্যস্ত করে তোলে। যদি কোনোরকম ক’রে দিন কাটাতে চাও তোমাদের তো হর্টিকালচরিস্ট্ ক্লাব আছে।”
“তুমি যে রঙিন লিলি ভালোবাস, বাগানে অনেক খুঁজেছিলুম, একটাও পাই নি। এবারে ভালো বৃষ্টি হয় নি বলে গাছগুলোর তেজ নেই।”
“কী তুমি মিছিমিছি বকছ। তার চেয়ে হলাকে ডেকে দাও, আমি শুয়ে শুয়েই বাগানের কাজ করব। তুমি কি বলতে চাও আমি শয্যাগত বলেই আমার বাগানও হবে শয্যাগত। শোনো আমার কথা। শুকনো সীজন ফুলের গাছগুলো উপড়িয়ে ফেলে সেখানে জমি তৈরি করিয়ে নাও। আমার সিঁড়ির নীচের ঘরে সরষের খোলের বস্তা আছে। হলার কাছে আছে তার চাবি।”
“তাই নাকি, হলা তো এতদিন কিছুই বলে নি।”
“বলতে ওর রুচবে কেন। ওকে কি তোমরা কম হেনস্তা করেছ। কাঁচা সাহেব এসে প্রবীণ কেরানীকে যেরকম গ্রাহ্য করে না সেইরকম আর কি।”
“হলা মালীর সম্বন্ধে সত্য কথা বলতে যদি চাই তবে সেটা অপ্রিয় হয়ে উঠবে।”
“আচ্ছা, আমি এই বিছানায় পড়ে থেকেই ওকে দিয়ে কাজ করাব, দেখবে দু দিনেই বাগানের চেহারা ফেরে কিনা। বাগানের ম্যাপটা আমার কাছে দিয়ো। আর আমার বাগানের ডায়রিটা। আমি ম্যাপে পেনসিলের দাগ দিয়ে সমস্ত ব্যবস্থা করে দেব।”
“আমার তাতে কোনো হাত থাকবে না?”
“না। যাবার আগে এ বাগানে সম্পূর্ণ আমারই ছাপ মেরে দেব। বলে রাখছি রাস্তার ধারের ঐ বট্ল-পাম্গুলো আমি একটাও রাখব না। ওখানে ঝাউগাছের সার লাগিয়ে দেব। অমন করে মাথা নেড়ো না। হয়ে গেলে তখন দেখো। তোমাদের ঐ লন্টা আমি রাখব না, ওখানে মারবেলের একটা বেদী বাঁধিয়ে দেব।”
“বেদীটা কি ও জায়গায় মানাবে। একটু যেন – যাকে বলে সস্তা নবাবি।”
“চুপ করো। খুব মানাবে। তুমি কোনো কথা বলতে পারবে না। কিছুদিনের জন্যে এ বাগানটা হবে একলা আমার, সম্পূর্ণ আমার। তার পরে সেই আমার বাগানটা আমি তোমাকে দিয়ে যাব। ভেবেছিলে আমার শক্তি গেছে। দেখিয়ে দেব কী করতে পারি। আরো তিনজন মালী আমার চাই, আর মজুর লাগবে জন ছয়েক। মনে আছে একদিন তুমি বলেছিলে, বাগান সাজিয়ে তোলার শিক্ষা আমার হয় নি। হয়েছে কি না তার পরীক্ষা দিয়ে যাব। তোমাকে মনে রাখতেই হবে যে এ আমার বাগান, আমারই বাগান, আমার