কখনো কখনো বাক্যকে অসম্পূর্ণ রেখে ‘যে’ শব্দের ব্যবহার হয়, যেমন : যে তোমার বুদ্ধি। বাকিটুকু ঊহ্য আছে বলেই এর দংশনের জোর বেশি। বংলা ভাষায় এইরকম ঘোঁচা-দেওয়া বাঁকা ভঙ্গীর আরও অনেক দৃষ্টান্ত পরে পাওয়া যাবে।
মানুষ ছাড়া আর কিছুকে কিংবা সমূহকে বোঝাতে গেলে ‘যে’ ছেড়ে ‘যা’ ধরতে হবে, যেমন : যা নেই ভারতে (মহাভারতে) তা নেই ভারতে। কিন্তু ‘যারা’ শব্দ ‘যা’ শব্দের বহুবচন নয়, ‘যে’ শব্দেরই বহুবচন, তাই ওর প্রয়োগ মানবার্থে। ‘তা’ বোঝায় অচেতনকে, কিন্তু ‘তারা’ বোঝায় মানুষকে। ‘সে’ শব্দের বহুবচন ‘তারা’।
শব্দকে দুনো করে দেবার যে ব্যবহার বাংলায় আছে, ‘কে’ এবং ‘যে’ সর্বনাম শব্দে তার দৃষ্টান্ত দেখানো যাক : কে কে এল, যে যে এসেছে। এর পূরণার্থে ‘সে সে লোক’ না বলে বলা হয় ‘তারা’ কিংবা ‘সেই সেই লোক’। ‘যেই যেই লোক’এর ব্যবহার নেই। সম্বন্ধপদে ‘যার যার’ ‘তার তার’ মানবার্থে চলে। এইরকম দ্বৈতে বহুকে এক এক করে দেখবার ভাব আছে। ভিন্ন ভিন্ন তুমি’কে নির্দেশ করে ‘তুমি তুমি’ ‘তোমার তোমার’ বললে দোষ ছিল না, কিন্তু বলা হয় না।
যে বাক্যের প্রথম অংশে দ্বৈতে আছে ‘যে’ তার পূরণার্থক শেষ অংশে সমগ্রবাচক বহুবচন-ব্যবহারটাই নিয়ম, যেমন : যে যে লোক, বা যাঁরা যাঁরা এসেছেন তাঁদের পান দিয়ো।
যত এত তত কত কত শব্দ পরিমাণবাচক। এদের মধ্যে ‘তত’ শব্দ ছাড়া আর সবগুলিতে দ্বিত্ব চলে।
এখন তখন যখন কখন কালবাচক। ‘কখন্’ শব্দ প্রায়ই প্রশ্নসূচক, সাধারণভাবে ‘কখন্’ বলতে অনিশ্চিত বা দূরবর্তী সময় বোঝায় : কখন্ যে গেছে। কিন্তু ‘কখনো’ প্রশ্নার্থক হয় না। প্রশ্নের ভাবে যখন বলি ‘সে কখনো এ কাজ করে’ তখন ‘কি’ অব্যয়-শব্দ ঊহ্য থাকে। দ্বিত্বে ‘কখনো’ শব্দের অর্থ ‘মাঝে মাঝে’। ‘কখনোই’ একটা ‘না’ চায় : কখনোই হবে না।
‘কখন্’ শব্দের ‘কী খেনে’ -ভঙ্গীওয়ালা রূপ কাব্যসাহিত্যে পাওয়া যায়।
‘কভু’ শব্দের অর্থও ‘কখনো’। এখন দৈবাৎ পদ্যে ছাড়া আর কোথাও কাজে লাগে না। ওর জুড়ি ছিল ‘তবু’ শব্দটা, কিন্তু ওর সময়বাচক অর্থটা নেই। ‘তবু’ শব্দের দ্বারা এমন কোনো সম্ভাবনা বোঝায় যেটা ঠিক উপযুক্ত বা আকাঙ্ক্ষিত নয় : যদিও রৌদ্র প্রখর তবু সে ছাতা মাথায় দেয় না, আমি তো বারণ করেছি তবু যদি যায় দুঃখ পাবে। কালবাচক ক্রিয়াবিশেষণে বহুবচন বা কর্মকারক নেই। সম্বন্ধপদে : এখনকার তখনকার কখনকার, কোন্ সময়কার, কোন্ সময়টার। অধিকরণে : কোন্ সময়ে, যে সময়ে। পদ্যে ‘কোন্ খনে’, গ্রাম্য ভাষায় ‘কী খেনে’ এবং অধিকাংশ স্থলেই শুভ যে সময়ে। পদ্যে ‘কোন্ খনে’, গ্রাম্য ভাষায় ‘কী খেনে’ এবং অধিকাংশ স্থলেই শুভ অশুভ লক্ষণ-সূচনায় এর প্রয়োগ হয়। অপাদান : যখন থেকে, কোন্ সময় থেকে।
কালবাচক ক্রিয়াবিশেষণ আরও একটা বাকি আছে ‘কবে’। ওর দুটি জুড়ি ছিল : এবে যবে। তারা পদ্যে আশ্রয় নিয়েছে। ‘তবে’ একদা ওদেরই দলে ছিল, কিন্তু এখন ‘তবু’ শব্দের মতো সেও অর্থ বদলিয়েছে। একটা সম্ভাবনার সঙ্গে আর-একটা সম্ভাবনাকে সে জোড়ে, যেমন : যদি যাও তবে বিপদে পড়বে। তবে এক কাজ করো : ‘তবে’ শব্দের পূর্ববর্তী ঊহ্য ব্যাপারের প্রসঙ্গে কোনো কাজ করার পরামর্শ।
এই প্রসঙ্গে ‘সবে’ শব্দটার উল্লেখ করা যেতে পারে। বলে থাকি : সবে এইমাত্র চলে গেছে, সবে পাঁচটা বেজেছে। এখানে ‘সবে’ অব্যয়, ওতে মাত্রা বোঝায়, সকল ক্ষেত্রেই পরিমাণের সীমা বোঝাতে তার প্রয়োগ : সবে পাঁচজন। সবে ভোর হয়েছে : অর্থাৎ সময়ের মাত্রা ভোরে এসে পৌঁচেছে। সেইরকম : সবে এক পোওয়া দুধ।
যেমন তেমন অমন এমন কেমন তুলনাবাচক। ‘কেমনে’ শব্দের ব্যবহার পদ্যে করণকারকে। ‘কেমন’ শব্দের দ্বৈতে সন্দেহ বোঝায় : কেমন কেমন ঠেকেছে। গা কেমন কেমন করছে : একটা অনির্দিষ্ট অসুস্থ ভাব। ‘কেমন’ শব্দের সঙ্গে ‘যেন’-যোগে