মাথাটা কাটিয়া কাঁদিয়া উঠিবে
যতটা উচ্চে পারো।
ইহাও এক শ্রেণীর নীতি, কিন্তু এথিক্স্ নহে। সংস্কৃত ভাষায় ধর্ম বলিতে মুখ্যত এথিক্স্ বুঝায়, কিন্তু ধর্মের মধ্যে আরো অনেক গৌণ পদার্থ আছে। মৌনী হইয়া ভোজন করিবে, ইহা ব্রাহ্মণের ধর্ম হইতে পারে কিন্তু ইহা এথিক্স্ নহে। অতএব চরিত্রনীতি শব্দটি উপযুক্ত হইয়াছে, কিন্তু ইহাকে আর-একটু সংহত করিয়া ‘চারিত্র’ বলিলে ব্যবহারের সুবিধাজনক হয়। চরিত্রনীতিশিক্ষা, চরিত্রনীতিবোধ, চরিত্রনৈতিক উন্নতি অপেক্ষা ‘চারিত্রশিক্ষা’, ‘চারিত্রবোধ’, ‘চারিত্রোন্নতি’ আমাদের কাছে সংগত বোধ হয়।. . . আর-একটি কথা জিজ্ঞাস্য, metaphysics শব্দের বাংলা কি ‘তত্ত্ববিদ্যা’ নহে।
লেখক মহাশয় [উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী] সেন্ট্রিপীটাল ও সেন্ট্রিফ্যুগাল ফোর্স-কে কেন্দ্রাভিসারিণী ও কেন্দ্রাপগামিনী শক্তি বলিয়াছেন—কেন্দ্রানুগ এবং কেন্দ্রাতিগ শক্তি আমাদের মতে সংক্ষিপ্ত ও সংগত।
লেখক মহাশয় ইংরেজি ফসিল্ শব্দের বাংলা করিয়াছেন ‘প্রস্তরীভূত কঙ্কাল’। কিন্তু উদ্ভিদ্ পদার্থের ফসিল সম্বন্ধে কঙ্কাল শব্দের প্রয়োগ কেমন করিয়া হইবে। ‘পাতার কঙ্কাল’ ঠিক বাংলা হয় না।. . . ফসিলের প্রতিশব্দ শিলাবিকার হইতে পারে, এরূপ মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছিলাম। কিন্তু মহলানবিশ মহাশয়ের সহিত আলোচনা করিয়া দেখিয়াছি ‘শিলাবিকা’ metamorphosed rock-এর উপযুক্ত ভাষান্তর হয়, এবং জীবশিলা শব্দ ফসিলের প্রতিশব্দরূপে ব্যবহৃত হইতে পারে।
বাংলায় বৈজ্ঞানিক পরিভাষা স্থির হয় নাই, অতএব পরিভাষার প্রয়োগ লইয়া আলোচনা কর্তব্য, কিন্তু বিবাদ করা অসংগত। ইংরেজি মিটিয়রলজির বাংলা-প্রতিশব্দ এখনো প্রচলিত হয় নাই, সুতরাং জগদানন্দবাবু যদি আপ্তের সংস্কৃত অভিধানের দৃষ্টান্তে ‘বায়ুনভোবিদ্যা’ ব্যবহার করিয়া কাজ চালাইয়া থাকেন, তাঁহাকে দোষ দিতে পারি না। যোগেশবাবু ‘আবহ’ শব্দ কোনো প্রাচীন গ্রনথ হইতে উদ্ধার করিয়াছেন, তাহার অর্থ ভূবায়ু। কিন্তু এই ভূবায়ু বলিতে প্রাচীনেরা কী বুঝিতেন, এবং তাহা আধুনিক অ্যাট্মস্ফিয়ার শব্দের প্রতিশব্দ কি না, তাহা বিশেষরূপে প্রমাণের অপেক্ষা রাখে—এক কথায় ইহার মীমাংসা হয় না। অগ্রে সেই প্রমাণ উপস্থিত না করিয়া জোর করিয়া কিছু বলা যায় না। শকুন্তলার সপ্তম অঙ্কে দুষ্যন্ত যখন স্বর্গলোক হইতে মর্ত্যে অবতরণ করিতেছেন, তখন মাতলিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখন আমরা কোন্ বায়ুর অধিকারে অসিয়াছি।” মাতলি উত্তর করিলেন, “গগনবর্তিনী মন্দাকিনী যেখানে বহমানা, চক্রবিভক্তরশ্মি জ্যোতিষ্কলোক যেখানে বর্তমান, বামনবেশধারী হরির দ্বিতীয় চরণপাতে পবিত্র এই স্থান ধূলিশূন্য প্রবহবায়ুর মার্গ।” দেখা যাইতেছে, প্রাচীনকালে ‘প্রবহ’ প্রভৃতি বায়ুর নাম তৎকালীন একটি কাল্পনিক বিশ্বতত্ত্বের মধ্যে প্রচলিত ছিল—সেগুলি একটি বিশেষ শাস্ত্রের পারিভাষিক প্রয়োগ। দেবীপুরাণে দেখা যায় :
প্রাবাহো নিবহশ্চৈব উদ্বহঃ সংবহস্তথা