Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)


অচলায়তন - ৫, ৪১
অচলায়তন

আচার্য। পঞ্চক, আমাদেরও এমনি করে ডাকতে হবে—বজ্ররবে যিনি দরজায় ঘা দিয়েছেন তাঁকে ঘরে ডেকে নাও—আর দেরি কোরো না।

ভুলে গিয়ে জীবন মরণ

লব তোমায় করে বরণ,

করিব জয় শরমত্রাসে

দাঁড়াব আজ তোমার পাশে

বাঁধন বাধা যাবে জ্বলে,

সুখদুঃখ দেব দলে,

ঝরের রাতে তোমার সাথে

   বাহির হব অভয় ভরে।

সকলে।                                                 উতল ধারা বাদল ঝরে—

দুয়ার খুলে এলে ঘরে।

চোখে আমার ঝলক লাগে,

সকল মনে পুলক জাগে,

চাহিতে চাই মুখের বাগে

    নয়ন মেলে কাঁপি ডরে।

পঞ্চক। ঐ আবার বজ্র।

আচার্য। দ্বিগুন বেগে বৃষ্টি এল।

উপাচার্য। আজ সমস্ত রাত এমনি করেই কাটবে।


৫
অচলায়তন
মহাপঞ্চক, তৃণাঞ্জন, সঞ্জীব, বিশ্বম্ভর, জয়োত্তম

মহাপঞ্চক। তোমরা অত ব্যস্ত হয়ে পড়ছ কেন!কোনো ভয় নেই।

তৃণাঞ্জন। তুমি তো বলছ ভয় নেই, এই যে খবর এল শত্রুসৈন্য অচলায়তনের প্রাচীর ফুটো করে দিয়েছে।

মহাপঞ্চক। এ-কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। শিলা জলে ভাসে! ম্লেচ্ছরা অচলায়তনের প্রাচীর ফুটো করে দেবে! পাগল হয়েছ!

সঞ্জীব। কে যে বললে দেখে এসেছে।

মহাপঞ্চক। সে স্বপ্ন দেখেছে।

জয়োত্তম। আজই তো আমাদের গুরুর আসবার কথা।

মহাপঞ্চক। তাঁর জন্যে সমস্ত আয়োজন ঠিক হয়ে গেছে; কেবল যে-ছেলের মা-বাপ ভাই-বোন কেউ মরে নি এমন নবম গর্ভের সন্তান এখনও জুটিয়ে আনতে পারলে না—দ্বারে দাঁড়িয়ে কে যে মহারক্ষা পড়বে ঠিক করতে পারছি নে।