রমেশ। তাঁহারা কোথায় গেছেন জানেন?
চন্দ্র। সে খবর তো বলিতে পারি না, পশ্চিমে গেছেন এই জানি।
রমেশ। কে কে গেছেন মশায়?
চন্দ্র। অন্নদাবাবু আর তাঁর মেয়ে।
রমেশ। ঠিক জানেন, তাঁহাদের সঙ্গে আর কেহ যান নাই?
চন্দ্র। ঠিক জানি বৈকি। যাইবার সময়ও আমার সঙ্গে দেখা হইয়াছে।
তখন রমেশ ধৈর্যরক্ষায় অক্ষম হইয়া কহিল, “আমি একজনের কাছে খবর পাইয়াছি, নলিনবাবু বলিয়া একটি বাবু তাঁহাদের সঙ্গে গেছেন।”
চন্দ্র। ভুল খবর পাইয়াছেন। নলিনবাবু আপনার ঐ বাসাটাতেই দিন-কয়েক ছিলেন। ইঁহারা যাত্রা করিবার দিন-দুইচার পূর্বেই তিনি কাশীতে গেছেন।
রমেশ তখন এই নলিনবাবুটির বিবরণ প্রশ্ন করিয়া করিয়া চন্দ্রমোহনের কাছ হইতে বাহির করিল। ইঁহার নাম নলিনাক্ষ চট্টোপাধ্যায়। শোনা গেছে, পূর্বে রংপুরে ডাক্তারি করিতেন, এখন মাকে লইয়া কাশীতেই আছেন। রমেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হইয়া রহিল। জিজ্ঞাসা করিল, যোগেন এখন কোথায় আছে বলিতে পারেন?”
চন্দ্রমোহন খবর দিল, যোগেন্দ্র ময়মন্সিঙের একটি জমিদারের স্থাপিত হাই-স্কুলের হেড্মাস্টার-পদে নিযুক্ত হইয়া বিশাইপুরে গিয়াছে।
চন্দ্রমোহন জিজ্ঞাসা করিল, “রমেশবাবু, আপনাকে তো অনেকদিন দেখি নাই; আপনি এতকাল কোথায় ছিলেন?”
রমেশ আর গোপন করবার কারণ দেখিল না; সে কহিল, “প্র্যাকটিস করিতে গাজিপুরে গিয়াছিলাম।”
চন্দ্র। এখন তবে কি সেইখানেই থাকা হইবে?
রমেশ। না, সেখানে আমার থাকা হইল না; এখন কোথায় যাইব ঠিক করি নাই।
রমেশ চলিয়া যাইবার অনতিকাল পরেই অক্ষয় আসিয়া উপস্থিত হইল। যোগেন্দ্র চলিয়া যাইবার সময়, মাঝে মাঝে তাহাদের বাড়ির তত্ত্বাবধানের জন্য অক্ষয়ের উপর ভার দিয়া গিয়াছিল। অক্ষয় যে ভার গ্রহণ করে তাহা রক্ষা করিতে কখনো শৈথিল্য করে না; তাই সে হঠাৎ যখন-তখন আসিয়া দেখিয়া যায়, বাড়ির বেহারা দুজনের মধ্যে একজনও হাজির থাকিয়া খবরদারি করিতেছে কি না।
চন্দ্রমোহন তাহাকে কহিল, “রমেশবাবু এই খানিকক্ষণ হইল এখান হইতে চলিয়া গেলেন।”
অক্ষয়। বলেন কী! কী করিতে আসিয়াছিলেন?
চন্দ্র। তাহা তো জানি না। আমার কাছে অন্নদাবাবুদের সমস্ত খবর জানিয়া লইলেন। এমন রোগা হইয়া গেছেন, হঠাৎ তাঁহাকে চেনাই কঠিন; যদি বেহারাকে না ডাকিতেন আমি চিনিতে পারিতাম না।
অক্ষয়। এখন কোথায় থাকেন, খবর পাইলেন?
চন্দ্র। এতদিন গাজিপুরে ছিলেন; এখন সেখান হইতে উঠিয়া আসিয়াছেন, কোথায় থাকিবেন ঠিক করিয়া বলিতে পারিলেন