বিশ্বম্ভর। ক্রমে এ-সব হচ্ছে কী! এতদিন এই আয়তনে আছি, কখনো তো এমন অনাচারের কথা শুনি নি। যে স্নাত তাকে তার ব্রত থেকে ছিন্ন করে আনা! আর স্বয়ং আমাদের আচার্যের এই কীর্তি!
জয়োত্তম। তাঁকে একবার জিজ্ঞাসা করেই দেখা যাক-না।
বিশ্বম্ভর। না না, আচার্যকে আমরা—
মহাপঞ্চক। কী করবে আচার্যকে, বলেই ফেলো।
বিশ্বম্ভর। তাই তো ভাবছি কী করা যায়। তাকে না হয়—আপনি বলে দিন না কী করতে হবে।
মহাপঞ্চক। আমি বলছি তাঁকে সংযত করে রাখতে হবে।
সঞ্জীব। কেমন করে?
মহাপঞ্চক। কেমন করে আবার কী! মত্ত হস্তীকে যেমন করে সংযত করতে হয় তেমনি করে।
জয়োত্তম। আমাদের আচার্যদেবকে কি তা হলে—
মহাপঞ্চক। হাঁ, তাঁকে বন্ধ করে রাখতে হবে। চুপ করে রইলে যে! পারবে না?
তৃণাঞ্জন। কেন পারব না। আপনি যদি আদেশ করেন তা হলেই—
জয়োত্তম। কিন্তু শাস্ত্রে কি এর—
মহাপঞ্চক। শাস্ত্রে বিধি আছে।
তৃণাঞ্জন। তবে আর ভাবনা কী?
উপাধ্যায়। মহাপঞ্চক, তোমার কিছুই বাধে না, আমার কিন্তু ভয় হচ্ছে।
আচার্য। বৎস, এতদিন তোমরা আমাকে আচার্য বলে মেনেছ, আজ তোমাদের সামনে আমার বিচারের দিন এসেছে। আমি স্বীকার করছি অপরাধের অন্ত নেই, অন্ত নেই, তার প্রায়শ্চিত্ত আমাকেই করতে হবে।
তৃণাঞ্জন। তবে আর দেরি করেন কেন। এদিকে যে আমাদের সর্বনাশ হয়।
জয়োত্তম। দেখো তৃণাঞ্জন, আস্তাকুঁড়ের ছাই দিয়ে তোমার এই মুখের গর্তটা ভরিয়ে দিতে হবে। একটু থামো না।
আচার্য। গুরু চলে গেলেন, আমরা তাঁর জায়গায় পুঁথি নিয়ে বসলুম; তার শুকনো পাতায় ক্ষুধা যতই মেটে না ততই পুঁথি কেবল বাড়াতে থাকি। খাদ্যের মধ্যে প্রাণ যতই কমে তার পরিমাণ ততই বেশি হয়। সেই জীর্ণ পুঁথির ভাণ্ডারে প্রতিদিন তোমরা দলে দলে আমার কাছে তোমাদের তরুণ হৃদয়টি মেলে ধরে কী চাইতে এসেছিলে! অমৃতবাণী? কিন্তু আমার তালু যে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে! রসনায় যে রসের লেশমাত্র নেই! এবার নিয়ে এসো সেই বাণী, গুরু, নিয়ে এসো হৃদয়ের বাণী। প্রাণকে প্রাণ দিয়ে জাগিয়ে দিয়ে যাও।
পঞ্চক। (ছুটিয়া প্রবেশ করিয়া) তোমার নববর্ষার সজল হাওয়ায় উড়ে যাক সব শুকনো পাতা—আয় রে নবীন কিশলয়—তোরা ছুটে আয়, তোরা ফুটে বেরো। ভাই জয়োত্তম, শুনছ না, আকাশের ঘন নীল মেঘের মধ্যে মুক্তির ডাক উঠেছে—‘আজ নৃত্য কর্ রে নৃত্য কর্'।
ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে