তৃতীয়। যুদ্ধের হাওয়া তো চলছে, এদিকে রাজকন্যা যে কোথায় অদর্শন হয়েছেন কেউ খোঁজ পায় না। মহারাজ তো বন্দী, এদিকে কে যে লড়াই চালাচ্ছে তারও কোনো ঠিকানা নেই।
দ্বিতীয়। কিন্তু আমি ভাবছি, এখন আমাদের উপায় কী? আমাদের ছিল এক রাজা এখন সাতটা হতে চলল, বেদে পুরাণে কোথাও তো এর তুলনা মেলে না।
প্রথম। মেলে বৈকি – পঞ্চপাণ্ডবের কথা ভেবে দেখো।
তৃতীয়। আরে সে হল পঞ্চপতি –
প্রথম। একই কথা। তারা হল পতি, এরা হল নৃপতি। কোনোটারই বাড়াবাড়ি সুবিধে নয়।
তৃতীয়। আমাদের পাঁচকড়ি একেবারে বেদব্যাস হয়ে উঠল হে — রামায়ণ মহাভারত ছাড়া কথাই কয় না।
দ্বিতীয়। তোরা তো রামায়ণ মহাভারত নিয়ে পথের মধ্যে আসর জমিয়েছিস, এদিকে আমাদের নিজের কুরুক্ষেত্রে কী ঘটছে খবর কেউ রাখিস নে।
প্রথম। ওরে বাবা – সেখানে যাবে কে? খবর যখন আসবে তখন ঘাড়ের উপর এসে আপনি পড়বে— জানতে বাকি থাকবে না।
দ্বিতীয়। ভয় কিসের রে?
প্রথম। তা তো সত্যি। তুমি যাও না।
তৃতীয়। আচ্ছা, চলো-না ধনঞ্জয়ের ওখানে। সে সব খবর জানে।
দ্বিতীয়। না জানলেও বানিয়ে দিতে জানে।
সুদর্শনা। একদিন আমাকে সকলে সৌভাগ্যবতী বলত, আমি যেখানে যেতুম সেখানেই ঐশ্বর্যের আলো জ্বলে উঠত। আজ আমি এ কী অকল্যাণ সঙ্গে করে এনেছি। তাই আমি ঘর ছেড়ে পথে এলুম।
সুরঙ্গমা। মা, যতক্ষণ না সেই রাজার ঘরে পৌঁছোবে ততক্ষণ তো পথই বন্ধু।
সুদর্শনা। চুপ কর, চুপ কর, তার কথা আর বলিস নে।
সুরঙ্গমা। তুমি যে তাঁর কাছেই ফিরে যাচ্ছ।
সুদর্শনা। কখনোই না।
সুরঙ্গমা। কার উপরে রাগ করছ মা!
সুদর্শনা। আমি তার নাম করতেও চাই নে।
সুরঙ্গমা। আচ্ছা, নাম কোরো না, তাঁর সবুর সইবে।
সুদর্শনা। আমি পথে বেরোলুম, সঙ্গে সে এল না?
সুরঙ্গমা। সমস্ত পথ জুড়ে আছেন তিনি।
সুদর্শনা। একবার বারণও করলে না? চুপ করে রইলি যে? বল-না, তোর রাজার এ কী রকম ব্যবহার?
সুরঙ্গমা। সে তো সবাই জানে, আমার রাজা নিষ্ঠুর। তাঁকে কি কেউ কোনোদিন টলাতে পারে?
সুদর্শনা। তবে তুই এমন দিনরাত ডাকিস কেন?